শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। টানা পাঁচ দিনের ভারী বৃষ্টি ও নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে এই ভাঙন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ৬০টি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নতুন করে প্রায় ৪০০ মিটার এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরও শতাধিক ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়রা।
গত পাঁচ দিনে নতুন করে বিলীন হয়েছে ৩২টি বাড়িঘর। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে পাঁচটি বসতবাড়ি ও পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পদ্মায় তলিয়ে গেছে। এ সময় আশঙ্কায় আরও অন্তত ১০টি দোকানপাট সরিয়ে নেয় স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন মাঝি বলেন, “বিকেল ৪টার দিকে হঠাৎ ভাঙনের খবর পাই। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোখের সামনে একের পর এক বাড়ি নদীতে ভেসে যেতে থাকে। সবাই প্রাণপণে মালপত্র সরানোর চেষ্টা করছে।”
বাজারের ব্যবসায়ী মোকলেস মাদবর বলেন, “আকস্মিক ভাঙনের কারণে আমরা শ্রমিক পাচ্ছি না। যার যার পরিবার নিয়েই মালপত্র সরাতে হচ্ছে। আমরা চাই, যেভাবেই হোক ভাঙন রোধ করা হোক।”
স্থানীয়দের দাবি, শুধু সোমবারের ভাঙনে নদীপাড় থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৬টি বসতবাড়ি এবং ১৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০টি বাড়ি ও ২০টির বেশি দোকানপাট অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় জাজিরায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে, যার ব্যয় হয়েছিল ১১০ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর থেকে বাঁধটির মাঝিরঘাট এলাকায় ধস শুরু হয়। ওই বছরের ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১০০ মিটার বাঁধ ধসে পড়ে নদীতে।
পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এ বাঁধ সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সিসি ব্লক ও বালুভর্তি জিওব্যাগ দিয়ে মেরামতের কাজ শুরু করে। কিন্তু ঈদের দিন ভোরে সংস্কার করা ওই অংশসহ আরও ২৫০ মিটার বাঁধ নদীতে তলিয়ে যায়।
জাজিরা উপজেলার ইউএনও কাবেরী রায় বলেন, “বাঁধে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে এবং ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করতে কাজ করছি।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, “আমরা এখনও সঠিকভাবে মাপতে না পারলেও আনুমানিক ৪০০ মিটার বাঁধ ভেঙেছে। আবহাওয়ার অবনতির কারণে দুই হাজারের বেশি জিওব্যাগ ডাম্পিং করা যাচ্ছে না। তবে জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রচেষ্টা চলছে।”
স্থানীয় মেম্বার মো. জলিল সরদার বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে বাঁধের পেছনে ফাটল দেখা দিয়েছিল, কিন্তু তেমন কেউ গুরুত্ব দেয়নি। এখন তো পুরো এলাকা বিলীন হওয়ার মুখে।”
বর্তমানে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রশাসনের বারবার মাইকিং, উদ্ধার কার্যক্রম এবং অস্থায়ী ডাম্পিং কাজ চললেও স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না দিলে পুরো অঞ্চলই পদ্মার গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তাদের একটাই দাবি—দ্রুত, কার্যকর ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল