আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন পার হয়ে যাওয়ার পরেও এখনও জয়ী প্রেসিডেন্টের নাম জানা যায়নি। যে ১৬ কোটির বেশি আমেরিকান নাগরিক ভোট দিয়েছেন, তাদের অনেকের ভোট এখনও গণনা করা হচ্ছে। একদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের বিজয় দাবি করছেন, অন্যদিকে গতকালই 'বিজয়ের পথে আছি' বলে ঘোষণা দেন তার ডেমোক্র্যাট চ্যালেঞ্জার জো বাইডেন।
ট্রাম্প আবার তার নির্বাচনী প্রতিপক্ষের দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়ে বলেছেন যে নির্বাচনে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন বাইডেন। একের পর এক টুইট করে চলেছেন ট্রাম্প। তবে টুইটার কর্তৃপক্ষ অবশ্য এসব টুইট বিতর্কিত ও বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছে।
এখনও লাখ লাখ ব্যালট গণনা চলছে। বাইডেন মিশিগান জিতে নিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ার ইঙ্গিত, বাইডেন উইসকনসিনও জিতে নেবেন। এখন বাকি চারটি রাজ্য - অ্যারিজোনা, নেভাডা, জর্জিয়া এবং পেনসিলভানিয়া।
বিবিসির পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন বাইডেনের ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে ২৪৩টি, আর ট্রাম্পের ২১৪টি। তবে জিততে হবে ২৭০টি - তাহলেই খুলে যাবে হোয়াইট হাউজের দরজা।
যেভাবে বাইডেন জিততে পারেন
সহজ কথা হচ্ছে, এখন অ্যারিজোনা, নেভাডা এবং উইসকনসিন রাজ্যে এগিয়ে আছে বাইডেন - এটা ধরে রাখতে পারলেই যথেষ্ট তার জয়ের জন্য।
মিশিগানের ডেট্রয়েটের ভোটগুলো বেশিরভাগই পড়েছে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে। সেখানে পোস্টাল ভোটেই এগিয়ে গেছেন বাইডেন।
অ্যারিজোনায় এখনো পোস্টাল ভোট গণনা শেষ হয়নি। তবে সেখানে স্থিতিশীল একটি লিড আছে বাইডেনের।
নেভাডায় দু'জেনর মধ্যে পার্থক্য খুবই কম, ব্যবধান মাত্র কয়েক হাজার ভোটের। এখানে নির্বাচনের দিনের ভোট পড়েছে ট্রাম্পের পক্ষে, আর পোস্টাল ব্যালটের ভোট বাইডেনের পক্ষে।
ট্রাম্প যেভাবে জিততে পারেন
যেসব জায়গায় ট্রাম্প এগিয়ে আছেন, তাকে সেসব জায়গায় এই লিড ধরে রাখতে হবে।
বিশেষত, পেনসিলভানিয়া এবং জর্জিয়া রাজ্যে। এখন পর্যন্ত বাইডেন যেসব রাজ্যে এগিয়ে আছেন, সেসবের অন্তত একটি রাজ্যে রিপাবলিকানদের জয় দরকার।
নেভাডায় ভোটের ব্যবধান খুবই কম। এই স্টেটে ফলাফল ট্রাম্পের পক্ষে নিয়ে আসতে তাকে হয়তো খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।
যেসব পোস্টাল ভোট দেরিতে এসেছে, সেগুলো যদি ট্রাম্পের পক্ষে থাকে, তাহলে বর্তমান পূর্বাভাস ঘুরতে সময় লাগবে না।
উইসকনসিনে ট্রাম্প পিছিয়ে আছেন।
পেনসিলভানিয়া এবং জর্জিয়া এখন পর্যন্ত বর্তমান প্রেসিডেন্টের শেষ ভরসার স্থান। কিন্তু কেবলমাত্র এসব স্টেটে জয়ই তার হোয়াইট হাউজ ধরে রাখা নিশ্চিত করতে পারবে না।
এর কারণ জর্জিয়ার আটলান্টার ভোট গণনা বাকি - এই কাউন্টিতে সাধারণত ডেমোক্র্যাট ভোট বেশি পড়ে।
অন্যদিকে, পেনসিলভানিয়ায় লাখ লাখ ভোট গণনা বাকি রয়েছে।
উইসকনসিন এবং মিশিগানে বাইডেন এগিয়ে আছেন। এখন যদি পেনসিলভানিয়া জিতে যেতে পারেন, তবে অ্যারিজোনা ও নেভাডায় হেরে গেলেও তার খুব বেশি সমস্যা হবে না।
ট্রাম্পের যখন জয় ছাড়া কোনো উপায় নেই, তখন বাইডেনের হাতে রয়েছে নানা বিকল্প।
আদালত পর্যন্তও গড়াতে পারে
বাইডেন যখন দাবি করছেন যে তিনি জয়ের পথে রয়েছেন, তখন ট্রাম্প ভোট জালিয়াতি এবং ব্যালট চুরির 'ভিত্তিহীন' অভিযোগ এনে বলেছেন যে তিনি এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন।
বিবিসির উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা অ্যান্টনি যুরকার বলছেন, যে দুঃস্বপ্নের পরিস্থিতির আশঙ্কা অনেকেই করছিলেন, সেটিই এখন বাস্তবের দিকে এগুচ্ছে বলে মনে হচ্ছে - যা বিরোধীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করবে এবং দেশকে একটা দীর্ঘ ও তিক্ত আইনি লড়াইয়ের দিকে নিয়ে যাবে।
প্রচারণার সময় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন যে নির্বাচনী ফলের ব্যবধান যদি খুব কম হয়, তাহলে তিনি ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ আনবেন।
বুধবার সকালে তিনি প্রমাণ করলেন যে তার সেই হুঁশিয়ারি শুধু মুখের কথা ছিল না, সেটাকে তিনি কাজে পরিণত করতে চান। কয়েক লাখ বৈধ ব্যালট গণনা বাকি থাকতেই তিনি নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা