১৪ নভেম্বর, ২০২০ ১২:৪৩

ট্রাম্পের ‘আনলাকি থার্টিন’, নির্বাচনে কারচুপির সব মামলা খারিজ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্পের ‘আনলাকি থার্টিন’, নির্বাচনে কারচুপির সব মামলা খারিজ

জর্জিয়াতেও বিজয় পেলেন জো বাইডেন। এর ফলে শুক্রবার পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী বাইডেনের ইলেকটোরাল কলেজ ভোট হলো ৩০৬। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প ৩০৬ ইলেকটোরাল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন হিলারির বিরুদ্ধে। এবার ঘটল ঠিক উল্টো ঘটনা। ট্রাম্পের থলিতে শুক্রবার পর্যন্ত জমা হয়েছে ২৩২ ইলেকটোরাল ভোট। এদিন ট্রাম্প জয় পেয়েছেন নর্থ ক্যারলিনায়। শুক্রবার ট্রাম্পের জন্য বিষাদের হওয়া সত্ত্বেও তিনি বাইডেনের কাছে নতি স্বীকারে রাজি হননি। রুজগার্ডেনে এক ব্রিফিংকালে শুক্রবার কিছুটা বিচলিতকণ্ঠে  ট্রাম্প এক পর্যায়ে বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে যাই ঘটুক, কে জানে কী ঘটবে, কোন প্রশাসন আসবে, আমি মনে করছি সময়ই তা বলে দেবে’।  

গণমাধ্যম কর্তৃক বাইডেনকে বিজয়ী হিসেবে উপস্থাপনের পর এই প্রথম প্রকাশ্যে দেখা যায় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে। এ সময় তাকে আগের মতো প্রফুল্ল দেখা যায়নি। 
 
এদিকে পেনসিলভেনিয়া, আরিজোনা ও মিশিগানে দায়ের মামলায় হেরেছেন ট্রাম্প। কোনো আদালতই বলেননি যে, ৩ নভেম্বরের নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে ভোট গণনায় কোনো অনিয়ম হয়েছে। ভোট গ্রহণের সময় কারচুপির ঘটনাও ঘটেনি। অর্থাৎ সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবার ছাড়পত্র দিয়েছেন আদালত। 

ট্রাম্পের আবেদনে জর্জিয়া স্টেটে ভোট পুনরায় গণনার পর শুক্রবারের ফলাফলে বাইডেনেরই জয় এসেছে। আর এটি ঘটল ট্রাম্পের অধীনস্থ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিবৃতির একদিন পর। ওই কর্মকর্তারা বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে নিরাপদ নির্বাচন হয় ৩ নভেম্বর। তারা আরও উল্লেখ করেছেন যে, এই নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। ভোটগ্রহণ থেকে গণনা পর্যন্ত সবকিছু যথাযথভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ ট্রাম্পের অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন তারা। এটি বিরল একটি ঘটনা ফেডারেল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য। 

১৩ নভেম্বর তথা ‘আনলাকি থার্টিন’ এ আরেকটি চপেটাঘাত এসেছে ট্রাম্পের জন্য। ট্রাম্পের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার যে ১৬ জন ফেডারেল প্রসিকিউটরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, জালিয়াতি, অনিয়মের তথ্য উদঘাটনের জন্য, তারা সবাই লিখিত পত্রে জানিয়েছেন যে, নির্বাচনে অনিয়মের কোনো ঘটনার প্রমাণ তারা পাননি।
 
এদিন পেনসিলভেনিয়া থেকেও দুঃসংবাদ পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওযাইয়োভিত্তিক ল’ ফার্ম ‘পোর্টার রিট মরিস অ্যান্ড আর্থার’ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে যে মামলা ট্রাম্পের পক্ষে পরিচালনা করছিল, সেটি তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন তথা  গণতান্ত্রিব্যবস্থাকে অবদমিত করার অভিপ্রায়ে প্রমাণহীন মামলা পরিচালনায় ল’ ফার্মের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবার আশঙ্কায় তারা সেটি প্রত্যাহার করেন বলে ট্রাম্পের লোকজনকে জানিয়েছেন। 

আরিজোনায় দায়ের মামলা থেকেও ট্রাম্পের লোকজনের সরে দাঁড়ানোর সংবাদ আসে শুক্রবার অপরাহ্নে। কারণ, যে অভিযোগ দায়ের করা হয় সেটি আদালতে প্রমাণিত হলেও ভোটের যে ব্যবধান তা কখনোই কভার করবে না। ‘নির্বাচনে ভোট চুরি অথবা প্রতারণার অভিযোগ কোনোভাবেই প্রমাণ করা সম্ভব নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন এই স্টেটের মামলা পরিচালনার জন্যে টাম্পের নিযুক্ত অ্যাটর্নি ল্যাঙ্গোফার। এর ফলে আরিজোনার ১১ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট যায় বাইডেনের ঝুলিতে। শুক্রবার বেলা ২টায় মিশিগান স্টেট কোর্টের জাজ টিমোথি এম কেনী ট্রাম্পের পক্ষে দায়ের একটি আবেদন নাকচ করে দেন। সেটি ছিল নির্বাচনী ফলাফলের সার্টিফিকেট বাইডেনকে প্রদান বিলম্বিত করার। জজ তার মন্তব্যে উল্লেখ করেন যে, বিজয়ের সার্টিফিকেট প্রদান নিয়ে কালক্ষেপণের অর্থ হবে বিচারব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার শামিল।

নির্বাচনের তিনদিন পর পর্যন্ত ডাকযোগে আসা ব্যালট গণনার আওতায় নিতে পেনসিলভেনিয়া সুপ্রিম কোর্টের একটি সিদ্ধান্তকে বেআইনি ঘোষণার দাবিতে ট্রাম্পের পক্ষে ফিলাডেলফিয়াস্থ থার্ড সার্কিট কোর্টে দায়ের মামলা খারিজ করা হয়।
 
রুজগার্ডেনে করোনা ভ্যাকসিন সম্পর্কিত বক্তব্যের সময় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পক্ষে ট্রাম্পের দায়ের করা বিভিন্ন মামলা পরিচালনাকারী অ্যাটর্নি  মার্ক ই ইলিয়াস টুইটে লিখেন যে, ‘আরেকটি শুক্রবার অপরাহ্নে আরও কিছু সুখবর আসবে বিভিন্ন আদালত থেকে।’

এমন নাজুক পরিস্থিতি সত্ত্বেও বাইডেন টিমকে রীতি অনুযায়ী কোনো সহযোগিতা দিচ্ছেন না হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা। ট্রাম্পের অনুমতি পাননি বলে তারা বাইডেন টিমকে জানিয়েছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সচেতন নাগরিকেরা। বাইডেনের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের প্রতি আবারও আহ্বান জানানো হয়েছে জনরায় মেনে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ সুগম করতে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শুক্রবার সিবিএস টিভির এক অনুষ্ঠানে একই অভিমত পোষণ করেন। ওবামা মন্তব্য করেন যে, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী প্রতিটি আমেরিকানই ২০ জানুয়ারিতে বাইডেনের কাছে ট্রাম্পের ক্ষমতা হস্তান্তর দেখতে প্রত্যাশী। এ নিয়ে কালক্ষেপণের অবকাশ নেই। 

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভোট (৭ কোটি ৮০ লাখ) পেয়ে বাইডেন যেমন জয়ী হয়েছেন, একইভাবে ট্রাম্প পরাজিত হলেও ৭ কোটি ২০ লাখ ভোট পেয়েছেন, এটিও অনেক বেশি। 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর