আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় ২৯ সাংবাদিকসহ ৫৩ জনের নামে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও পুলিশের সাবেক কয়েকজন ঊধঁŸতন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত নাসিব হাসান রিয়ানের বাবা গোলাম রাজ্জাক গতকাল এ অভিযোগ দাখিল করেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম। ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর শ্যামলী রিং রোডে অ্যালায়েন্স হাসপাতালের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১৭ বছরের নাসিব হাসান রিয়ান।
অভিযোগে যাঁদের আসামি করা হয়েছে তাঁরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, মো. আনিসুল হক, হাছান মাহমুদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, হাসানুল হক ইনু ও মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও মোহাম্মদ আলী আরাফাত। ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান হারুন আর রশীদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, র্যাবের সাবেক ডিজি মো. হারুন আর রশিদ, ডিএমপির সাবেক যুগ্মকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, এনটিএমসির সাবেক ডিজি জিয়াউল আহসান, আদাবর থানার সাবেক ওসি মো. মাহাবুব রহমান, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আইনজীবী নিঝুম মজুমদার, ঢাবির অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান।
২৯ সাংবাদিক হলেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী (সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা), ফরিদা ইয়াসমিন (সভাপতি, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সাবেক এমপি), শ্যামল দত্ত (সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব), মোজাম্মেল বাবু (সিইও ও প্রধান সম্পাদক, একাত্তর টিভি), নবনীতা চৌধুরী (টিভি সঞ্চালক), সুভাষ সিংহ রায় (সম্পাদক, এবি নিউজ২৪ডটকম), আহমেদ জোবায়ের (এমডি, সময় টিভি), তুষার আবদুল্লাহ (সাবেক বার্তাপ্রধান, সময় টিভি; বার্তাপ্রধান, এখন টিভি), সাইফুল আলম (সম্পাদক, যুগান্তর), নঈম নিজাম (সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন), আবেদ খান (সাবেক সম্পাদক, সমকাল), প্রভাষ আমিন (বার্তাপ্রধান, এটিএন নিউজ), ফারজানা রূপা (সাবেক প্রধান প্রতিবেদক, একাত্তর টিভি), শাকিল আহমেদ (সাবেক বার্তাপ্রধান, একাত্তর টিভি), মিথিলা ফারজানা (সাবেক প্রধান, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, একাত্তর টিভি), জায়েদুল আহসান পিন্টু (সম্পাদক, ডিবিসি), মঞ্জুরুল ইসলাম (প্রধান সম্পাদক, ডিবিসি), আশীস সৈকত (প্রধান বার্তাসম্পাদক, ইনডিপেনডেন্ট টিভি), মানস ঘোষ (হেড অব নিউজ, এশিয়ান টিভি), প্রণব সাহা (ডিবিসি), মাসুদা ভাট্টি (সাবেক তথ্য কমিশনার), মুন্নি সাহা (সাবেক প্রধান নির্বাহী সম্পাদক, এটিএন নিউজ), জ ই মামুন (সাবেক প্রধান নির্বাহী সম্পাদক, এটিএন বাংলা), স্বদেশ রায় (সাবেক নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক জনকণ্ঠ), সোমা ইসলাম (চ্যানেল আই), শ্যামল সরকার (ইত্তেফাক), অজয় দাশগুপ্ত (সমকাল), আশরাফুল আলম খোকন (সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব)।
অভিযোগে বলা হয়, ২০ থেকে ৫২ নম্বর আসামিরা আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যাকে বৈধতা দিতে প্ররোচনা ও উসকানি দেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার দাবি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে মিথ্যা খবর প্রচার করেছেন। পাশাপাশি আহত ও নিহতদের সঠিক তথ্য গোপনের উদ্দেশ্যে টক শো, কলাম লিখে ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সত্য আড়াল করে গুজব ও মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন। আন্দোলন চলমান অবস্থায় তাঁরা আসামি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে ‘আমরা আপনার সাথে আছি’ বলে সরাসরি গণহত্যায় প্ররোচনা ও উসকানি দিয়েছেন।