আগস্টের বন্যায় ঘরবাড়ি, সম্পদের পাশাপাশি তাদের সহায়-সম্বল সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ায় কঠিন বিপদ সামনে নিয়ে দিন পার করছেন। এসব খামারি নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখলেও পুঁজির অভাবে কিছু করতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মাসের টানা এক সপ্তাহের বন্যায় চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলায় পোলট্র্রি, মৎস্য, গরু-মহিষ, দুগ্ধ উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাতের ক্ষতি ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। লাখো মৎস্য ঘেরের মাছ, হাজার হাজার পোলট্র্রি খামারের মুরগি পানিতে ভেসে গেছে। অগণিত গরু-ছাগল-মহিষ-হাঁস ও গৃহপালিত পশু ভেসে গেছে। এদের মধ্যে যারা বাণিজ্যিকভাবে এসব খামার পরিচালনা করতেন তারা একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
ফেনী জেলা পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল আলম জানান, ফেনীতে শুধু পোলট্রি খাতের ক্ষতি ৪০০ কোটি টাকা। জেলার ৫ হাজার পোলট্রি খামারি মুরগি ও ডিম উৎপাদন করতেন। এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ খামার সম্পূর্ণ ও ২০ শতাংশ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের নগদ প্রণোদনা, চলমান ঋণের সুদ মওকুফ অথবা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখা এবং সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া ছাড়া তারা কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে শুধু মৎস্য খাতেই ২৯০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মিরসরাই উপজেলার খামারিরা। এই উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় মহুরি প্রজেক্ট এলাকার হাজার হাজার হেক্টর মৎস্য খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এখানে সর্বমোট ১৬ হাজার ৮৬৪টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১৪২ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার জানিয়েছেন, কুমিল্লায় প্রাণিসম্পদ খাতে ৩০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত সাড়ে তিন হাজার পোলট্রি খামারি নিঃস্ব হয়ে গেছে। এ ছাড়া ২ লাখের বেশি বিভিন্ন প্রজাতির গবাদিপশুর ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব খামারির অনেকেই আগে থেকে ঋণগ্রস্ত। এর মধ্যে বন্যার কারণে তারা সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এই অবস্থায় সরকারি সহযোগিতা ছাড়া তারা কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না।
ধুম ইউনিয়নের আরেক খামারি মোমিন উল্ল্যাহ বলেন, ‘সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারও মুরগির পাশাপাশি ঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো ঠিক করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে কতদিন লাগবে জানি না। তবে সরকার যদি সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে অথবা পুরনো ঋণের কিস্তিও আপাতত বন্ধ করে সুবিধা দেয় তাহলেও হয়তো কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানো যাবে।’