করছি করছি করেও আর করা হয়নি বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে বহুল কাঙ্খিত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ। গত নয় বছর ধরে বগুড়াবাসীর সঙ্গে এবং ১৩ বছর ধরে সিরাজগঞ্জবাসীর সঙ্গে শুধু ওয়াদা দিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ সরকার। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বগুড়াসহ উত্তরের জেলাগুলোর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে রেলপথ নির্মাণ করার দুই দফা ঘোষণা করলেও আজ অবধি সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন আমলে বগুড়া থেকে গেছে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে। অথচ এই রেলপথ নির্মাণ হলে ঢাকার সঙ্গে বগুড়াসহ উত্তরের যোগাযোগে ১১২ কিলোমিটার সড়ক কমে দুর্ভোগ লাঘব হতো জনসাধারণের।
জানা যায়, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এই দুই জেলার মধ্যে সরাসরি রেলপথ না থাকায় উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলোকে যাত্রী ও কৃষিপণ্য নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বর্তমানে বগুড়ার সান্তাহার জংশন হয়ে নাটোর, পাবনা, ঈশ্বরদী, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া হয়ে যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে হয়। শুধুমাত্র বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে তিনটি জেলার পথ ঘুরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে সময় লেগে যায় প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। আর প্রায় ৪০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা।
সড়ক পথে ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাসে করে ঢাকা যেতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। অথচ বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুতে সরাসরি ট্রেনযোগে পৌঁছাতে সময়ে লাগবে প্রায় ১ ঘণ্টা। বাসে করে ঢাকায় যেতে ২০০ কিলোমিটার ও ট্রেনে করে পাড়ি দিতে হয় ৪০৫ কিলোমিটার।
বগুড়া থেকে সরাসরি যমুনা সেতুতে ট্রেন সার্ভিস চালু হলে বগুড়াসহ উত্তরের জেলার ট্রেন যাত্রীদের ১১২ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। সেই সাথে খরচ কমে গিয়ে উত্তরের ট্রেন যাত্রীদের আর্থিকভাবে সাশ্রয় হবে। এছাড়া সড়ক পথ হয়ে বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারি, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট কুড়িগ্রাম জেলার ঢাকাগামীরা যাতায়াত করেন। এ কারণে সড়ক ও রেলপথে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। যানজটের কারণে ঢাকা পৌঁছাতে হয় নানা দুর্ভোগ নিয়ে। এই দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জসহ উত্তরের বাসিন্দারা রেলপথ নির্মাণের দাবি তোলেন। এই পথটি নির্মাণ হলে উত্তরের ১০ জেলায় আর্থিকগতি আরো বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া মাত্র ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় ঢাকায় রেলযোগে যেতে পারবেন এলাকাবাসী। এতে খরচ কমে গিয়ে উত্তরের ট্রেনযাত্রীদের অর্থ সাশ্রয় হবে। দূর হবে ভোগান্তিও। কৃষিপণ্য পরিবহনে খরচ কমে গিয়ে ঢাকার বাজারে তাজা সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। এসব প্রকল্প প্রস্তাবনা করার পরেও অজ্ঞাত কারণে ফাইলবন্দি হয়ে আছে বছরের পর বছর। বলা হচ্ছে বগুড়া বিএনপির জেলা বলে এই উন্নয়ন কাজটি চাপা পড়ে আছে।
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় দু’টি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা হবে। একটি হলো- বগুড়া স্টেশন থেকে ২ হাজার ৬০০ ফুট পশ্চিমে অবস্থিত বগুড়া শহরের রেলাইল পর্যন্ত। এরপর বগুড়া রেলাইল থেকে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুর এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার এবং অপরটি হলো বগুড়ার কাহালু স্টেশন থেকে রাণীরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ। এজন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প মোতাবেক নতুন ওই রেলপথে জংশন ও ৭টি স্টেশন স্থাপন করা হবে। বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ প্রস্তাবিত ৮৪ কিলোমিটার রেলপথের জন্য মোট ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ার সীমানায় ৫২ কিলোমিটার রেলপথের জন্য ৫১০ একর এবং সিরাজগঞ্জ অংশের ৩২ কিলোমিটারের জন্য প্রয়োজন আরও ৪৫০ একর জমি। ২০১১ সালের ৯ এপ্রিল সিরাজগঞ্জে এবং ২০১৫ সালে বগুড়ায় দলীয় এক জনসভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ রেলপথ উপহার দেওয়ার ঘোষণা করেন। সেই হিসেবে বগুড়াবাসীর সাথে ৯ বছর এবং সিরাজগঞ্জবাসীর সাথে ১৩ বছর ধরে উন্নয়নের নামে তামাশা করা হয়েছে। কথা দিয়ে কথা রাখেননি হাসিনা।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক মাহবুবর রহমান মন্টু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের পাশের জেলাগুলোও অনেক উন্নত হয়েছে। নতুন রাস্তাঘাট, অবকাঠামো হয়েছে। আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো। আমরা চাই বগুড়া আরও এগিয়ে যাক। কারণ ভৌগলিক কারণে বগুড়া উত্তরাঞ্চলের যে কোন জেলার চেয়ে সব কিছুতে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এবার রেলপথ নির্মাণ করে উন্নয়নের ধারায় সংযোগ করা হোক বগুড়াকে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া বগুড়াকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। যেগুলো উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল সেগুলো কেন হয়নি বিয়ষটি খতিয়ে দেখা হবে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথটির ভূমি হুকুম দখল করতে যৌথ তদন্ত চলছে। তদন্তের কাজ শেষ হলে জমি হুকুম দখল করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল