কালেমায়ে তাওহিদ ঘোষণার মাধ্যমে একজন মানুষ ইমানের ময়দানে পা রাখে। একটু আগেও সে ছিল মানুষ, এখন হয়েছে মুমিন। ইমানের চর্চার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সে মুসলমানের মাকামে পৌঁছবে। তারপর সে হবে মুত্তাকি। একসময় সাধনার আরও উঁচু মাকামে গিয়ে হবে অলিউল্লাহ। তবে ইমানের ঘোষণার পরপরই তার ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়ে যায়। আর নামাজের জন্য তাকে করতে হবে অজু। অজু মানে হলো ধোয়া। শরিয়তের পরিভাষায় নামাজ, কোরআন স্পর্শ ও বাইতুল্লাহ তাওয়াফের মতো নির্দিষ্ট ইবাদতের আগে বিশেষ পদ্ধতিতে শরীরের চারটি অঙ্গ ধোয়ার নাম অজু।
পবিত্র কোরআনে বিশেষভাবে নামাজ ও কোরআন স্পর্শের আগে অজু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে শারীরিক পবিত্রতা লাভের জন্য গোসলের পরেই অজুর স্থান। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে- ‘হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াও তখন তোমাদের মুখ ও হাত কনুই পর্যন্ত ধোবে এবং তোমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে নেবে, আর গিট পর্যন্ত পা ধোবে। যদি তোমরা অপবিত্র থাক তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। যদি তোমরা অসুস্থ থাক বা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আস কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা কর আর পানি না পাও, তবে পরিষ্কার মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে। তায়াম্মুমের পদ্ধতি হলো পবিত্র মাটি মুখে ও হাতে বুলিয়ে নেবে। আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিতে চান না বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের ওপর তাঁর অনুগ্রহ সম্পন্ন করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জানাতে পার।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত ৬)। হাদিস শরিফে রসুল (সা.) অজুকে নামাজের চাবি বলেছেন। ইসলামের চতুর্থ খলিফা সাইয়েদেনা হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত- রসুল (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা নামাজের চাবি। আর নামাজের তাকবির সব কাজ হারাম করে দেয় এবং সালাম সব কাজ হালাল করে দেয়।’ (সুনানে তিরমিজি)। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতের চাবি হচ্ছে নামাজ। আর নামাজের চাবি হচ্ছে অজু।’ (সুনানে তিরমিজি)। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত- অন্য হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া নামাজ কবুল হয় না এবং খেয়ানতের সম্পদ দিয়ে সদকা কবুল হয় না।’ (সুনানে আবু দাউদ)। হাদিস শরিফে অজুর বিশেষ মর্যাদা ঘোষণা করা হয়েছে। জলিলে কদর সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুমিন মুসলমান যখন অজু করে তখন সে বিশেষ এক পবিত্রতা লাভ করে। অজুর মাধ্যমে তার দেহের সঙ্গে অন্তরজগৎও পবিত্র হওয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হয়ে যায়। বান্দা যখন অজুর পানি দিয়ে মুখ ধোয় পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে তার চোখের গুনাহ ধুয়ে যায়। বান্দা যখন হাত ধোয়, পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে হাতের গুনাহ ঝরে যায়। এভাবে অজুতে সে যেসব অঙ্গ ধোয়, পানির সঙ্গে ওই অঙ্গগুলোর গুনাহ ধুয়ে যায়।’ (সুনানে তিরমিজি)। অজুর মাধ্যমে কেবল গুনাহ মাফ হবে না, জান্নাতও নিশ্চিত হবে বলে হাদিস শরিফে ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি কেয়ামতের দিন অজুর অঙ্গগুলো দেখেই নবীজি (সা.) জান্নাতি উম্মতকে চিনতে পারবেন। একবার সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেছিলেন কেয়ামতের দিন কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে উম্মতে মুহাম্মদিকে চেনা যাবে কীভাবে? জবাবে নবীজি বলেছেন, ‘এ উম্মতের অজুর অঙ্গগুলোতে নুর চমকাতে থাকবে।’
লেখক : সুপার, সোনার মদিনা হাফেজিয়া দাখিল মাদরাসা
নন্দীপাড়া, খিলগাঁও, ঢাকা