ফাতেহা-ই ইয়াজদাহম যুগের শ্রেষ্ঠ ওলি শেখ মুহিউদ্দীন বড়পীর আবদুল কাদের জিলানির (রহ.) স্মরণে পালন করা হয়। ‘ইয়াজদাহম’ ফারসি শব্দ থেকে এসেছে। অর্থ হলো- এগারো। ফাতেহা-ই ইয়াজদাহম বলতে রবিউস সানি মাসের ১১ এর ফাতেহা শরিফকে বলা হয়। হিজরি ৫৬১ সালের ১১ রবিউস সানি মাসে মহান এ সুফি বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) ইহজগৎ ত্যাগ করেন। এজন্য উপমহাদেশের মুসলিমদের কাছে এ দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি ৪৭০, মতান্তরে ৪৭১ হিজরি সালের পয়লা রমজান ইরাকের বাগদাদের জিলান নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আবু মুহাম্মদ আবদুল কাদের আল-জিলানি আল হাসানি ওয়াল হুসাইনি।
বড়পীর ছিলেন কাদেরিয়া তরিকার প্রবর্তক, শরিয়ত ও তরিকত জগতের মহাসম্রাট, যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকিহ এবং দার্শনিক। তাঁর শিক্ষার পেছনে রয়েছে মায়ের অবদান। তাঁর মায়ের পরামর্শে ৪৮৮ সালে ১৮ বছর বয়সে বাগদাদে রওনা হন। বাগদাদে গিয়ে তিনি শায়েখ আবু সাইদ ইবনে মোবারক মাখজুমি হাম্বলি, আবুল ওয়াফা আলী ইবনে আকিল এবং আবু মোহাম্মদ ইবনে হোসাইন ইবনে মোহাম্মদ (রহ.)-এর কাছে ইলমে ফিকাহ, শায়েখ আবু গালিব মুহাম্মদ ইবনে হাসান বাকিল্লানি, শায়েখ আবু সাইদ ইবনে আবদুল করিম ও শায়েখ আবুল গানায়েম মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মদ (রহ.) প্রমুখের কাছে ইলমে হাদিস এবং শায়েখ আবু জাকারিয়া তাবরেয়ি (রহ.) কাছে সাহিত্যের উচ্চতর পাঠ লাভ করেন। বড়পীর অল্প বয়সেই মাদরাসার পরীক্ষা দিয়ে শ্রেষ্ঠ সনদ অর্জন করেন। মাত্র ৯ বছর শিক্ষা অর্জন করে ১৩টি বিষয়ের ওপর সনদ লাভ করেন।
হজরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) মহান আল্লাহর বাণী এবং প্রিয়নবী (সা.)-এর কথামালা মানুষের কাছে পৌঁছে দীনের প্রচার ও প্রসার করেন। তাঁর কথা শুনতে ছোটবড় ধনী-গরিব সবাই উপস্থিত হয়ে শ্রবণ এবং সে অনুযায়ী আমল করতেন। বড়পীরের মাধ্যমেই ইসলাম আগের অবস্থায় ফিরে এসেছিল। এজন্যই তাঁর উপাধি ছিল মুহিউদ্দীন।
বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। যা বর্তমানে বিভিন্ন দালিলিক হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব গ্রন্থের মধ্যে ‘ফতহুল গায়েব গুনিয়াতুত তালেবিন’, ‘ফতহুল রব্বানি’, ‘কালিদায়ে গাওসিয়া’ উল্লেখযোগ্য। যারা বড়পীর সাহেবকে ভালোবাসেন, তারাই বড়পীর সাহেবের এ ওফাতের দিনটি গুরুত্বের সঙ্গে ফাতেহা-ই ইয়াজদাহম পালন করবেন। মসজিদ, মাদরাসা ও খানকায় বড়পীরের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে স্মরণ করা হবে। অতঃপর মিলাদ জিকিরের পর মোনাজাতে সব মৃত ব্যক্তি, দেশ ও জাতির জন্য দোয়া হবে।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক