মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত পেলেই সুচিকিৎসার্থে বিদেশে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এখন শুধু বোর্ডের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট মঙ্গলবারই পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন তিনি। মেডিকেল বোর্ড কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। হাসপাতাল ও চিকিৎসক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে বার বার তাঁকে বিদেশে ‘মাল্টি ডিসিপ্লিনারি অ্যাডভান্স হেলথ কেয়ার সেন্টারে’ নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করার পরও তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার অনুমতি না দেওয়ায় তাঁকে বিদেশে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তখন দেশের বাইরে থেকে যেসব চিকিৎসক চিকিৎসা করতে এসেছিলেন, তাঁরাও পর্যন্ত বলেছিলেন- দেশের বাইরে কোনো মাল্টি ডিসিপ্লিনারি উন্নত মেডিকেল সেন্টারে তাঁর সার্জারি দরকার। ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস ছাড়াও কিডনি, ডায়াবেটিস, আর্থ্যারাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। চিকিৎিসকরা লিভার প্রতিস্থাপন করার পরামর্শও দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তিনি এখনো মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ড যখন সিদ্ধান্ত দেবে- তখনই তাঁকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়াকে সিসিইউ সুবিধা-সংবলিত কেবিনে রেখেই সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে তিনি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে দেখে এসেছেন। একই সঙ্গে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সর্বশেষ ৮ জুলাই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে ভোর ৪টায় জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২ জুলাই গুলশানের বাসায় ফেরেন বেগম খালেদা জিয়া। গত ২৫ জুন এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁর হৃদ্যন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। বর্তমানে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন আছেন। গত চার বছরে বেশ কয়েকবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা আসলেই ভালো নয়। লিভার সিরোসিস ছাড়াও কিডনি, ফুসফুস, ডায়াবেটিস, আর্থ্যারাইটিস, হৃদ্রোগ, ফুসফুসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন তিনি। একটা সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা। আর সেটি নিয়ন্ত্রণ নিতে না নিতেই আরেকটি সমস্যা জটিল আকার ধারণ করছে। তখন আবার সেটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে এ অবস্থায় বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা যখন তাঁর হবে- তখনই হয়তো মেডিকেল বোর্ড উন্নত কোনো দেশের ‘অ্যাডভান্সড হেলথ সেন্টার’-এ তাঁকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে। সেখানে তাঁর লিভার প্রতিস্থাপন করা হতে পারে। দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যেতে হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে তাঁর পরিবারের আবেদনে সরকার নির্বাহী আদেশে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার শর্তে তাঁকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এরপর ছয় মাস পর পর তাঁর মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ নেওয়ার আগেই বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দন্ড মওকুফ করেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই মিথ্যা সাজা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পান খালেদা জিয়া। খালেদার নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবনে তাঁর প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়ক কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ইসহাক মিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিরাপত্তায় কাজ শুরু করেছে পুলিশ। জানা যায়, গত মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় পুলিশ স্কট দেওয়ার নির্দেশ দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ ও হাসপাতালে চলাচলের সময় তাঁর নিরাপত্তায় পুলিশ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দুটি দপ্তরে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। ২০২০ সাল থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত থাকলেও তখন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য নিয়মিত পুলিশি নিরাপত্তা ছিল না।