মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ওরাল ক্যান্সারের সাতকাহন

খাদ্য তালিকায় ফল মূল, শাক-সবজির পরিমাণ কম থাকাও এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। মুখের ভিতর অসুস্থ ও তীক্ষ দাঁতের আঘাতে সৃষ্ট ক্ষত দীর্ঘদিন থাকলে তা থেকেও ক্যান্সার হতে পারে

অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু

ওরাল ক্যান্সারের সাতকাহন

মুখ গহ্বর ও জিহ্বায় কোষের কোনো অস্বাভাবিক বৃদ্ধির মাধ্যমে ওরাল ক্যান্সারের অস্তিত্ব প্রকাশ পায়। ইউরোপ-আমেরিকায় মহিলাদের তুলনায় পুরুষের এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি, প্রায় দ্বিগুণ। অন্যসব দেশে ওরাল ক্যান্সার অন্য ক্যান্সারের তুলনায় মাত্র ২-৩ শতাংশ বেশি হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সব ক্যান্সারের মধ্যে ২৫-৩০ শতাংশ হলো মুখের ক্যান্সার। এখানে পুরুষের চেয়ে নারীদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

কারণ : আমাদের দেশসহ উপমহাদেশের সব দেশে ওরাল ক্যান্সারের প্রধান কারণ হলো, সাদাপাতা, জর্দা, গুল ইত্যাদি যাকে এক কথায় ধোঁয়াবিহীন তামাক বলা হয়। এর সঙ্গে বিড়ি-সিগারেট এবং মদ মুখের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। হিউম্যান প্যাপিলোমা নামক এক ধরনের ভাইরাস মুখে ক্যান্সারের জন্য দায়ী। খাদ্য তালিকায় ফল মূল, শাক-সবজির পরিমাণ কম থাকাও এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। মুখের ভিতর অসুস্থ ও তীক্ষ দাঁতের আঘাতে সৃষ্ট ক্ষত দীর্ঘদিন থাকলে তা থেকেও ক্যান্সার হতে পারে।

লক্ষণ : মুখ ও জিভের ঘা সাধারণ চিকিত্সায় ভালো না হওয়া। ক্ষতস্থানে ব্যথা হওয়া আর রক্ত পড়া। ঘাড় বা গলার কোনো অংশ ফুলে ওঠা।

প্রতিরোধ : পান, জর্দা, সাদা পাতা, গুল, বিড়ি, সিগারেট, মদ ইত্যাদি ত্যাগের মাধ্যমে ৭৫ ভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। মুখের সুস্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হতে হবে। প্রতিদিন নিয়ম করে ফল মূল, শাক-সবজি খেতে হবে। ক্যান্সার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব ভালো একটা ধারণা নেই। বেশির ভাগই জানেন না ক্যান্সার কী, কেন হয়, লক্ষণ কী কী এবং প্রতিকার বা চিকিত্সা কী। মুখ ও গলার ক্যান্সারের স্থান : মুখ গহ্বর (ওরাল ক্যাভিটি), গলবিল (ফ্যারিংস), কণ্ঠনালি (ল্যারিংস), নাক (ন্যাসাল ক্যাভিটি), নাকের হাড়ের ভিতর

বায়ু গহ্বর (প্যারা নাসাল সাইনাস), অন্যান্য

লালা গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি ইত্যাদি।

ক্যান্সারের অন্যতম কিছু কারণ : ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, পান পাতা চিবানো, অতি-বেগুনি রশ্মি এবং পেশাগত ঝুঁকি, কিছু কিছু ভাইরাস, যেমন : হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, ইপ্সটেইনবার ভাইরাস, অপুষ্টি এবং ভিটামিনের অভাব, গ্যাস্ট্রিক ইসোফেজিয়াল রিফ্ল্যাক্স ডিজিজ, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মুখের ভিতরে সাদা দাগ বা লিউকোপ্লাকিয়া।

এসব ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণসমূহ : যে কোনো গুটি বা ঘা, যা সাধারণ চিকিত্সায় সারছে না। গলার ভিতরের কোনো ঘা, যা সাধারণ চিকিত্সায় সারছে না। ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া। গলার স্বর ভেঙে যাওয়া বা পরিবর্তন হওয়া।

বাড়িতে বসে সহজেই করণীয়: আপনি কি ধূমপান করেন? আপনার কি ঢোক গিলতে বা কোনো কিছু চিবাতে অসুবিধা হয়? আপনার কি এমন বদভ্যাস আছে, যাতে আপনার ঠোঁট কেটে যায়? আপনি কি নকল দাঁত ব্যবহার করেন, যা পুরনো বা ঠিকমতো বসেনি? আপনার মুখের যে কোনো জায়গায় কখনো কোনো ফোলা বা পিণ্ড লক্ষ্য করেছেন? আপনি কি আপনার মুখের ভিতরে কোনো সাদা, লাল বা গাঢ় ক্ষত লক্ষ্য করেছেন? আপনি কি কখনো আপনার মুখে বা ঘাড়ে বা মুখমণ্ডলের যে কোনো জায়গায় ঝিন ঝিন বা অসারতা অনুভব করেছেন— এসব প্রশ্নের উত্তরের উপর অনেক কিছুই অনুমান করা যায়। তাই অবহেলা না করে এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।

 

সর্বশেষ খবর