হামাসের দাবি অনুযায়ী, ইরানে ইসমাইল হানিয়াকে ইসরায়েলের হামলায় হত্যা করা হয়েছে। ইসমাইল হানিয়া ছিলেন হামাসের একজন শীর্ষ নেতা এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর আন্তর্জাতিক কূটনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ মুখ। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন। যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের বিমান হামলায় তার তিন ছেলে—হাজেম, আমির ও মোহাম্মদ—নিহত হন। হামাস জানিয়েছে, এই হামলায় হানিয়া তার আরও এক ছেলে, তিন মেয়ে এবং চার নাতিকে হারিয়েছেন।
ইসমাইল হানিয়া বরাবরই কঠোর ভাষায় কথা বলতেন। তবে অনেক কূটনীতিক তাকে গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কট্টরপন্থী নেতাদের তুলনায় মধ্যপন্থী ঘরানার নেতা হিসেবে দেখেছেন। ২০১৭ সালে হামাসের শীর্ষ পদে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি তুরস্ক এবং কাতারের রাজধানী দোহায় যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন। এই দুই দেশে বিভিন্ন সময় অবস্থান তাকে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম করেছিল।
ইসমাইল হানিয়ার নিহত ছেলেরা হামাসের সদস্য ছিল না বলে তিনি দাবি করেছিলেন। ইসরায়েলের দাবি ছিল যে, হানিয়ার ছেলেরা হামাসের যোদ্ধা ছিলেন। কিন্তু হানিয়া এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, তার সন্তানেরা নিরপরাধ। তাদের হত্যাকাণ্ড যখন হানিয়াকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এর ফলে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় প্রভাব পড়বে কি না, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনের জনগণের স্বার্থ সবার ওপরে।’
২০১৭ সালে হানিয়া গাজা ছাড়েন এবং ইয়াহিয়া সিনওয়ারের স্থলাভিষিক্ত হন। সিনওয়ার দুই দশকের বেশি সময় ইসরায়েলি কারাগারে কাটিয়েছিলেন। ২০১১ সালে বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি পাওয়ার পর গাজায় ফিরলে হানিয়া তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। হানিয়া হামাসকে সশস্ত্র গ্রুপ থেকে একটি রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করেছিলেন।
হানিয়া আরব সরকারগুলোর সঙ্গে হামাসের রাজনৈতিক যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তিনি কাতারে অবস্থান করে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে দেখা করতে নভেম্বরের শুরুতে হানিয়া তেহরানে গিয়েছিলেন। যুবা বয়সে হানিয়া গাজা শহরের ইসলামি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতেন এবং তখন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়েছিলেন।
১৯৮৭ সালে প্রথম ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা গঠনের সময় তিনি হামাসে যোগ দেন এবং পরবর্তীকালে হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমাদ ইয়াসিনের একজন বিশিষ্ট খাদেম হয়ে ওঠেন। ২০০৬ সালে হামাস ফিলিস্তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে হানিয়া ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০৭ সালে হামাস গাজার শাসনভার গ্রহণ করে। মাহমুদ আব্বাস ওই বছরই হানিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেছিলেন। ২০১২ সালে হানিয়াকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, হামাস সশস্ত্র সংগ্রাম পরিত্যাগ করেছে কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘অবশ্যই না’। তিনি বলেছিলেন, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামরিক—সব ধরনের প্রতিরোধ জারি থাকবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল