ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের নজিরবিহীন আক্রমণের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর, হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করে ভয়াবহ হামলা চালায়, যা দেশটির জন্য বড় ধরনের আঘাত হিসেবে দেখা দেয়। এ ঘটনায় এক হাজারেরও বেশি ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার পর থেকে ইসরায়েল অব্যাহতভাবে গাজায় প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়ে আসছে। হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৯৬ হাজার মানুষ।
এই সংঘাতের এক বছর পূর্ণ হতে চললেও গাজা যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে তিনজন ইসরায়েলি নাগরিক তাদের জীবনের পরিবর্তন নিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপির সঙ্গে কথা বলেছেন। কেউ যুদ্ধ থেকে মুক্তির আশা করছেন, আবার কেউ দেশের রাজনীতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
ইসরায়েলের রিজার্ভ সেনা কর্নেল এরেজ রেগেভ যুদ্ধের প্রথম দিকেই গাজায় যান। তার খামার, রেস্তোরাঁ এবং শাকসবজির দোকান রয়েছে। এগুলো তিনি যাত্রার সময় স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে যান। পাঁচ সন্তানের এই বাবা জানান, যুদ্ধের প্রথম চার মাসে তার ইউনিটের কেউ বাড়ি ফেরার সুযোগ পাননি। যদিও তার খামার ও বাগানের দিকে মন পড়ে থাকে, যুদ্ধক্ষেত্রে থাকতে সবসময় তাকে মৃত্যুর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কাজ করতে হয়। এরেজ বলেন, যুদ্ধের ভেতর এবং ঘরের জীবন সম্পূর্ণ আলাদা। উভয় ক্ষেত্রেই বড় বড় বিষয়গুলি তার জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত আমি আমার গ্রিনহাউসের টমেটোখেতে ফিরে আসতে চাই এবং সন্তানদের সঙ্গে বাগানে আম পাড়তে চাই।
৭ অক্টোবর হামাসের হামলার দিন নিৎসান পেরি কনসার্টে ছিলেন, যেখানে হামাসের রকেট আঘাত হানে। কনসার্টের জায়গা থেকে তিনি এবং তার দুই বন্ধু পালাতে সক্ষম হলেও, ৩৭০ জন নিহত হন। পেরির জীবন এই হামলার পর একদম বদলে যায়। তিনি একাকিত্ব, হতাশা ও আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তার আংটিবদল করা সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কও ভেঙে গেছে। পেরি তার ব্যবসা কয়েক মাস বন্ধ রাখতে বাধ্য হন এবং মানসিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এখনো সংগ্রাম করছেন। তিনি বলেন, "এই মানসিক অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করছি।"
ইসরায়েলি আন্দোলনকর্মী কালানিত শ্যারন পিং ফন্ট নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমান নেতানিয়াহু সরকারের ওপর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, গাজা থেকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি না হওয়ার জন্য সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। শ্যারন এবং তার সংগঠনের সদস্যরা গোলাপি পোশাক ও পতাকা নিয়ে ইসরায়েলে নিয়মিত বিক্ষোভ ও প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করছেন। তারা বিশ্বাস করেন, নেতানিয়াহুর পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে।
৭ অক্টোবরের হামলার পর অনেক ইসরায়েলি নাগরিককে সহায়তা প্রদান করেছিল পিং ফন্টের সদস্যরা, যারা গাজা থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের খাবার ও আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করেছিলেন।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল