শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া আইন কর্মকর্তারা পদত্যাগ করতে শুরু করেছেন। গতকাল পর্যন্ত ৯০ জনের বেশি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইংয়ে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।
এসব পদে নিয়োগ পেতে এরই মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যাশী আইনজীবীরা। বিএনপি ও জামায়াতপন্থি আইনজীবী নেতাদের চেম্বারে প্রত্যাশী আইনজীবীদের নামের তালিকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সাধারণ আইনজীবীদের দাবি, পরিবর্তনের এই সময়ে শুধু দলীয় পরিচয়ে নয়, মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে এসব আইন কর্মকর্তা।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার উচ্চ আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল, তিনজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আরও ২০৩ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়। এর মধ্যে ৬০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও ১৪৩ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল দায়িত্ব পালন করেন আপিল বিভাগ ও হাই কোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে। বিগত সরকারের সর্বশেষ নিয়োগের পর নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক আইন কর্মকর্তার মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। শুধু ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা, কিংবা আওয়ামী লীগের বড় নেতার সুপারিশে বেশ কয়েকজন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে সে সময়। সুপ্রিম কোর্টের অনেক আইনজীবী মনে করেন, এবারও ঠিক একইভাবে নামের তালিকা তৈরি হচ্ছে। বিগত সময়ে মিছিল মিটিং, কিংবা দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা ছিল এমন আইনজীবীদের তালিকার শীর্ষে রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের দায়িত্বাশীল একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখনো পর্যন্ত প্রায় ৬০০ জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েছে তাদের কাছে। প্রতিদিনই জীবনবৃত্তান্ত জমা হচ্ছে। এতে কেউ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) আবার কেউ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল (এএজি) হতে চাচ্ছেন। সূত্রটি জানায়, জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা আলাদা করে তালিকা করছেন তাদের দলীয় আইনজীবীদের। সমমনা দলগুলোর পদধারী আইনজীবীরাও চাচ্ছেন ডিএজি-এএজি হতে। এর মধ্যে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের দল গণ অধিকার পরিষদের দু-একজন নেতাও জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
পদত্যাগ ও নতুন নিয়োগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সলিসিটর উইংয়ের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ডিএজি-এএজি নিয়োগে কোনো আইন নেই। তাদের চাকরি সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে এসব পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। তার সন্তুষ্টি সাপেক্ষে বহাল থাকে এসব নিয়োগ।
জানা গেছে, উচ্চ ও নিম্ন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিয়োগে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস না থাকায় সরকার প্রধান, আইনমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী আইনজীবী নেতাদের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে এতদিন এসব পদে নিয়োগ পেয়ে আসছিলেন প্রত্যাশী আইনজীবীরা। অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার পরিবর্তে শুধু দলীয় আনুগত্য হয় তাদের নিয়োগের প্রধান শর্ত। আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেতে কোনো নিয়োগ পরীক্ষায়ও বসতে হয় না, লাগে না কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা মনে করেন, এই নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় বা রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে মেধা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া দরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এতদিন মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে দলীয় পরিচয়কে বড় করে দেখা হতো আইন কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে। তবে আমরা প্রত্যাশা করি, বৈষম্যবিরোধী এই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে যে পরিবর্তন হচ্ছে, আইন অঙ্গনেও এর ছোঁয়া লাগবে। বিশেষ করে দলীয় বা রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে মেধা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে আইন কর্মকর্তা নিয়োগে।