বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ, বেতন বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের তিনটি কারখানার শ্রমিকরা গতকালও কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা মহাসড়ক অবরোধ ও বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরও করেন। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা একটি কারখানার গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দেন।
শিল্প পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সদর থানার বাংলাবাজার এলাকায় অবস্থিত পারটেক্স বেভারেজ লিমিটেডের শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধিসহ ১৮ দফা দাবিতে ফ্যাক্টরি অভ্যন্তরে গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে উৎপাদন কাজ বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করে আসছে। মঙ্গলবার মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বসে আলোচনা করে শ্রমিকদের দাবি সম্পর্কে মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি। শ্রমিকরা বুধবার সকাল থেকে ফ্যাক্টরির সামনে কর্মবিরতি পালন শুরু করে। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে কারখানার আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। এ ছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তিন সড়কে সকাল ৮টা থেকে কারখানার সামনে কর্মবিরতি পালন করেন আড়ং ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রজেক্টের কর্মীরা।
শিল্প পুলিশ ও জিএমপি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বেশকিছু শিল্প-কারখানা রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে শ্রমিকরা আগস্ট মাসের বেতনের দাবি করে আসছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে আবারও শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চক্রবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। তাতে ওই সড়কের উভয় পাশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শ্রমিকরা সারাবো এলাকাসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণার দাবি করেন। এ ছাড়া ওইসব কারখানার শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে তাদের সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নিতে বলেন। একপর্যায়ে বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে জানালার কাচ ও গেট ভাঙচুর চালায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে ওই এলাকার কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এ সময় পার্শ্ববর্তী ভবানীপুর এলাকার বিগ বস করপোরেশন লিমিটেড কারখানা খোলা রাখার কারণে বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা বিগ বস কারখানাতে আক্রমণ করতে গেলে উভয় কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে দুপুরে বেক্সিমকো কারখানার একদল বিক্ষুব্ধ শ্রমিক বিগ বস কারখানার গেটের পাশে গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিগ বস কারখানার সামনে এলে উভয় কারখানার শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে এলে বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা গাড়ির ওপর আক্রমণ করতে আসে এবং গাড়ি উল্টো ঘুরিয়ে দেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিগ বস কারখানার গোডাউনে আগুন নিভানোর কাজ চলছিল। এদিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে নিরাপত্তাহীনতায় পোশাক কারখানা। থানা পুলিশ ও শিল্প পুলিশের নীরব ভূমিকার ফলে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও বহিরাগতদের অতর্কিত হামলা চলছেই। এতে কারখানা মালিকরা রয়েছেন চরম আতঙ্কে। এমন চলতে থাকলে কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। পোশাকশিল্পে অশান্ত পরিবেশের উত্তরণ না ঘটলে বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া আশুলিয়ায় বিভিন্ন দাবিতে চলা শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে ৫০টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আরও ২৭টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো ও বিশমাইল জিরাবো সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনন্ত, মেডলার, শারমিন গ্রুপ, ডেকো, এস টোয়েন্টি ওয়ান, মন্ডল নিটওয়্যার লিমিটেড, ম্যাংঙ্গো ট্রেক, এআর জিন্স, এনভয়, স্টাইলিং গ্রুপ, ভিনটেক্স, ইয়াগী বাংলাদেশ, ক্রস ওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, অরোনিমা, ডেবনিয়ার, দি রোজ, জেনারেশন নেক্সট, সিনসিন, ডিসান সোয়েটার ও সিগমা ফ্যাশনসহ বেশকিছু পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে সকাল ১০টা পর্যন্ত নিউএইজ, আল মুসলিম, নাসা সুপার কমপ্লান্স, নাসা এ জে সুপার, নাসা বেসিক কমপ্লেক্স ও জনরন সোয়েটারের উৎপাদন চালু ছিল বলে খবর পাওয়া গেছে।