ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শাস্তি হিসেবে ইরানের তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল খাতসহ একাধিক সেক্টরে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের তেল বেচাকেনা ও পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং যানবাহনগুলোর কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছে পশ্চিমারা। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও অর্থ বিভাগ এক যৌথ বিবৃতিতে স্থানীয় সময় শুক্রবার এ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘ইরানের নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তেহরানের এসব কর্মকান্ডের প্রতিক্রিয়া জানাতে আমরা প্রস্তুত। আজকের পদক্ষেপের মাধ্যমে ইরান সরকারকে বাধা দেওয়া হবে, যাতে তারা তেল বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ পারমাণবিক কর্মসূচি, ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা এবং মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত উসকে দিতে ব্যবহার করতে না পারে।’
মার্কিন প্রশাসনের নতুন এ পদক্ষেপের ফলে ইরানের সঙ্গে যুক্ত যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ করা হবে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবে না। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় ১৭টি জাহাজ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, পানামা এবং আরও কিছু দেশে নিবন্ধিত যানবাহনসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠান ও ছয়টি যানবাহন এসেছে।
ইরান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার অধীন, যা দেশটির প্রায় সব ধরনের বাণিজ্য ও সম্পদকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কর্মসূচির আওতায় হাজারো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের মধ্যে ইরানি এবং অন্যান্য বিদেশি সংস্থাও রয়েছে। মার্কিন কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের (সিআরএস) তথ্য অনুসারে, ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্য হলো ইরানকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি ও আঞ্চলিক সামরিক প্রভাব কমাতে বাধ্য করা এবং তেহরানের নীতি পরিবর্তন করা।
উল্লেখ্য, ইরান থেকে গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এ হামলার জবাব হিসেবে তেলআবিব সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সময় যুক্তরাষ্ট্রও তেহরানকে দমাতে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জোরদার করেছে।
দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে হিজবুল্লাহ : মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা ও হুঁশিয়ারি। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র ইসলামী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এরই মধ্যে গোষ্ঠীটি তার শীর্ষ কমান্ড গঠনের কাজও শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে দক্ষিণ লেবাননে বিমান অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এ অভিযানে এরই মধ্যে নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা ও সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহসহ প্রায় সব শীর্ষ কমান্ডার। এক কথায়, ১০ দিনে হিজবুল্লাহর হাইকমান্ড ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। ১ অক্টোবর থেকে অভিযানে অংশ নিয়েছে স্থলবাহিনীও। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠছে গোষ্ঠীটি।
হিজবুল্লাহর হামলায় ১২ ইসরায়েলি সেনা নিহত : লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা নতুন করে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যাতে অন্তত ১২ জন সেনা নিহত হয়েছে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সেনা সমাবেশ ও কয়েকটি অবৈধ ইহুদি বসতি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ইসরায়েলের বাহিনী স্বীকার করেছে, দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান চালাতে গিয়ে তাদের এক ডজনের বেশি সেনা নিহত হয়েছে। হিজবুল্লাহ গতকাল একাধিক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি সেনা সমাবেশ লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও মর্টার হামলা চালায়। একই সঙ্গে প্রতিরোধ যোদ্ধারা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি ও অবৈধ ইহুদি বসতিতে হামলা চালিয়েছে। ইসলামী যোদ্ধারা উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব এবং কমান্ড সেন্টারের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ ও সময়মতো যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের অভিযান পরিচালনা করেছে।
এ ছাড়া ইসরায়েলি সেনাদের দক্ষিণ লেবাননে অনুপ্রবেশের বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা। তারা জানিয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান চালানোর দাবি করলেও বাস্তবতা হচ্ছে, তারা এখনো লেবাননের ভিতরে ঢুকতে পারেনি।