ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে হতবাক করে দিয়ে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা এবার তাদের সবচেয়ে সুরক্ষিত সামরিক ঘাঁটিতে দফায় দফায় আঘাত হেনেছে। এক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করেছে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী এমন ড্রোন, যা ইসরায়েলি বাহিনীর রাডারে ধরা পড়েনি। এ হামলায় অন্তত দেড় শতাধিক ইসরায়েলি সেনা হতাহত হয়েছে, যার মধ্যে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে চারজন। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স।
খবরে বলা হয়, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিক্রিয়ায় রবিবার রাতে হাইফার বেনইয়ামিনায় ইসরায়েলি সুরক্ষিত সামরিক ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা। লেবাননের ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। হিজবুল্লাহ বলেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গোলানি ব্রিগেড প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে মুহুর্মুহু ড্রোন হামলা চালিয়েছে তারা। এর মধ্যে কিছু মনুষ্যবিহীন ড্রোনও রয়েছে; যেগুলো আগে কখনো তারা ব্যবহার করেনি। এসব ড্রোনের বেশির ভাগই ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার আমাদের ছোড়া ড্রোন শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাইফার দক্ষিণে বেনইয়ামিনা এলাকায় সামরিক বাহিনীর গোলানি ব্রিগেড ক্যাম্পে ড্রোন হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। হামলায় নিহত ইসরায়েলি সেনার সংখ্যা বেড়ে ৪-এ পৌঁছেছে। দেশটির অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বলছে, হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ৬৭ জন সেনা। এ বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন, হিজবুল্লাহর হামলায় সেনা হতাহতের এ ঘটনা ‘চরম বেদনাদায়ক’। হামলায় বিধ্বস্ত এই ঘাঁটিটি গতকাল পরিদর্শন করেছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি। তিনি সেনাদের বলেন, ‘আমরা যুদ্ধে আছি এবং হোম ফ্রন্টের প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে হামলা করাটা কঠিন। কিন্তু হামলা হয়েছে, এ হামলার ফলাফল অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’
‘থাড’ ক্ষেপণাস্ত্র ও সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : হিজবুল্লাহর তাক লাগানো হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে রক্ষায় নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী সমরাস্ত্র টার্মিনাল হাই অল্টিচিউড এরিয়া ডিফেন্স সিস্টেম (থাড) দিচ্ছে। দেশটির অস্ত্রভান্ডারে অত্যন্ত কার্যকর এবং বিশেষ যেসব সমরাস্ত্র রয়েছে, সেসবের মধ্যে থাড অন্যতম।
থাডের সার্বিক পরিচালনার জন্য শতাধিক মার্কিন সেনাও পাঠানো হচ্ছে সেখানে। এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগন। এ ছাড়া এক বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইসরায়েলকে আত্মরক্ষার সহায়তা হিসেবে পাঠানো হচ্ছে এই থাড। পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে সম্প্রতি যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা ইসরায়েলের পাশাপাশি ওই অঞ্চলে আমাদের সামরিক ঘাঁটিতে থাকা সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য উভয়ের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। ইরানের মদতপুষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী ইসরায়েলের পাশাপাশি আমাদের সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করেও হামলা চালাচ্ছে। তাই সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ইসরায়েলে থাড পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেনা সূত্র জানায়, থাড বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ ও দুর্ধর্ষ ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী সমরাস্ত্র। এ সমরাস্ত্রটি বহন করতে ৬টি ট্রাকের প্রয়োজন পড়ে। প্রতিটি ট্রাকে ৬টি লঞ্চার এবং প্রতিটি লঞ্চারে ৮টি ইন্টারসেপ্টর থাকে। থাডের রাডারও খুব শক্তিশালী। এটি পরিচালনা করতেই প্রয়োজন পড়ে প্রায় ১০০ সেনার। এর আগেও যুদ্ধকালীন সহযোগিতা হিসেবে ইসরায়েলে যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সেসব কখনো ইসরায়েলের সীমানার মধ্যে স্থায়ীভাবে অবস্থান করেনি। ইসরায়েলি বাহিনীকে সহযোগিতা শেষে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে ফিরে গেছে সেগুলো। সেই হিসেবে এই প্রথম ইসরায়েলে নিজেদের সমরাস্ত্র ও সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। একে ইসরায়েলে নিজেদের সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন অনেক সামরিক বিশ্লেষক।