ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে কড়া অবস্থানের মধ্যেই রোহিঙ্গা সমস্যা মেটাতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মূলত দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সঙ্গে অত্যন্ত নিঃশব্দে কাজ শুরু করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমনকি সহিংসতা কবলিত রাখাইন প্রদেশের উন্নয়নের জন্য যাবতীয় সহায়তার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ভারত সরকারের শীর্ষ পর্যায়েই একটা বিষয়ে সহমত পোষণ করা হয়েছে যে, আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারতের অবশ্যই উচিত রোহিঙ্গা সমস্যা হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই তা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
অতি সস্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানান, ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গার মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। এ জন্য প্রতিটি রাজ্যকে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিতকরণের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠনের কথাও বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী তাদের বিতাড়িত করা হবে বলেও জানান তিনি। রিজিজু এও জানান, গোটা বিশ্বের মধ্যে ভারতেই বেশি সংখ্যায় উদ্বাস্তু বসবাস করেন, তাই উদ্বাস্তুদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হবে সে বিষয়ে ভারতকে কারও উপদেশেরও দরকার নেই।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বক্তব্যের পাল্টা হিসেবে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুটি পদক্ষেপ নিয়েছে। একদিকে মিয়ানমারের সু চি সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন করা ও রোহিঙ্গা জঙ্গিদের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানানো ঠিক একই সঙ্গে সহিংসতা কবলিত রাখাইন প্রদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সহায়তা করা। যদিও ঐতিহ্য অনুযায়ী সহিংসতা, নির্যাতন বা কাজের খোঁজে ভারতে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তুদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারত সব সময়ই বিরত থেকেছে।
অতি সম্প্রতি মিয়ানমার সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে রাখাইন প্রদেশে কট্টরপন্থিদের সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেও প্রকাশ্যে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলেননি। সমাধানে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ মেনে চলার জন্য উৎসাহ দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তরফে মিয়ানমার সরকারকে এও পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হয়েছে যে রাখাইন প্রদেশে বসবাসকারী বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী উভয়ের ক্ষেত্রেই ভারতের সহযোগিতা বজায় থাকবে। কারণ রাখাইনে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে দরিদ্রতার হার শতকরা ৭০ ভাগ, যেখানে গোটা দেশটিতে বসবাসকারী ৩৫ শতাংশ মানুষ দরিদ্রতার সঙ্গে দিন কাটাচ্ছেন।