আমাদের প্রত্যেকেরই সুরক্ষিত বাড়ি কাম্য। যেমনটা থ্রিলার সিনেমায় দেখা যায়। অত্যাধুনিক নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা বাড়ি, যেখানে নিয়োজিত থাকবে অসংখ্য সিকিউরিটি। এমন ‘সেফ হাউসে’ বাস করে সবাই ঝামেলামুক্ত থাকতে চান। জানলে অবাক হবেন, বিশ্বের ধনী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের বাড়িগুলোও তেমনি এক ধরনের ‘সেফ হাউস’...
হোয়াইট হাউস [ ওয়াশিংটন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ]
দুনিয়ার সবচেয়ে পরাক্রমশালী দেশের প্রেসিডেন্টের বাসভবন
গোটা বিশ্বের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হলো ‘হোয়াইট হাউস’। চার তলা এই ভবনে রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। তার মধ্যে অন্যতম হলো- প্রেসিডেন্টস রুম, ওভাল অফিস ও কেবিনেট রুম। আগে প্রেসিডেন্টস রুমে সেক্রেটারি দপ্তর ও প্রেসিডেন্টের দপ্তর ছিল। ওভাল অফিসটি বর্তমানে প্রেসিডেন্টের প্রধান দপ্তর। মূলকথা, আজকের দুনিয়ার সবচেয়ে পরাক্রমশালী দেশের প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কার্যালয় হোয়াইট হাউস। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর নিরাপত্তাব্যবস্থা হওয়ার কথা সর্বোচ্চ মাত্রার। তাই তো এটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত বাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ বাড়ির চারপাশের দেয়াল লোহার গ্রিল দিয়ে তৈরি হলেও বিরাট সব ট্রাকের ধাক্কাতেও এর কিছুই হবে না। এ বাড়ির ভিতরে-বাইরে এবং চারপাশে অনেক সিকিউরিটি গার্ড নিযুক্ত আছেন। তাই কেউ চাইলেও এই বাড়িতে ঢুকতে পারবেন না। এ ছাড়াও এই বাড়ির চারপাশে বিমান হামলার সুযোগ নেই। কারণ হোয়াইট হাউসে আছে এর নিজস্ব রাডার। এই বাড়ির ওপরের আকাশে বিমান উড়ানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যদি কেউ ভুল করেও চলে যান, তাকে গুনতে হবে জরিমানা ও শাস্তি। যদি কেউ দূর থেকে এই বাড়িতে গুলি ছোড়েন তবুও কিছুই হবে না। কারণ এর সব দরজা-জানালা বুলেট প্রুভ। হোয়াইট হাউসে পরমাণু হামলা বা বিস্ফোরণ ঘটলেও বাড়ির বা এর ভিতরে থাকা মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না। প্রয়োজনে বাড়ি থেকে দ্রুত লুকিয়ে পড়ার জন্য আছে গোপন বাংকার। এই বাংকারে প্রবেশ করলেই নিরাপদ থাকবেন প্রেসিডেন্ট।
রায়ংসং রেসিডেন্স [ পিয়ংইয়ং, উত্তর কোরিয়া ]
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের প্রধান বাসভবন
উত্তর কোরিয়ার পিয়ংইয়ং সিটিতে অবস্থিত এই বাড়ি। যা কিম জং উনের বাড়ি এবং বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থান হিসেবে বিবেচিত। এটি আবাসিক নম্বর-৫৫ নামেও পরিচিত। স্থানীয় লোকেরা সেন্ট্রাল লাক্সারি ম্যানশন বলে সম্বোধন করেন। কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে বাস করেন তিনি। নিজের বাড়ির নিরাপত্তা বিষয়ক যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে কিম জং উন পিছপা হন না। তার বাড়ির চারপাশে ইলেকট্রিক চালিত দেয়াল আছে। আর এই দেয়ালের বাইরে সিকিউরিটি গার্ডরা দিনরাত কড়া নজর রেখে চলেছেন। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, রায়ংসং রেসিডেন্সের চারপাশে লুকিয়ে মাইন পুঁতে রাখা আছে। তাই অচেনা কেউ এই বাড়ির চারপাশে গেলেই নির্ঘাত মারা পড়বেন। লোহার খাঁচার মাঝখানে গলিত কংক্রিট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই বাড়ির চারপাশের দেয়াল। জানা যায়, যে কোনো পরমাণু হামলাতেও কিম জং উনের এই বাড়িটির কিছুই হবে না। শুধু তাই নয়; বাড়ির ভিতরের সবাই থাকবেন সুরক্ষিত। তার পরেও যদি এই বাড়ি থেকে কখনো বের হতে হয়, সে জন্য আছে গোপন সুড়ঙ্গ পথ। সেই সুরক্ষা পথ দিয়ে চাইলেই কিম জং উন ও তার পরিবার বিপদ মুহূর্তে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে পারবেন। সব নিরপত্তাবলয় পেরিয়েও যদি কেউ বাড়িতে প্রবেশ করেন, তাহলে সে হয়তো আর বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না। কারণ একবার এই বাড়িতে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠলে, চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস। তাই বাড়িতে যদি কেউ প্রবেশ করেন, তাহলে বিষাক্ত গ্যাসে সেখানেই মারা পড়বেন তিনি।
ক্রোনস্ট্যাড ফোর্ট
রাশিয়ার আলেকজান্ডার-১ সবচেয়ে নিরাপদ দুর্গ
এটি ফোর্ট আলেকজান্ডার হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত রাশিয়ান দুর্গ। যা ফিনল্যান্ডের একটি কৃত্রিম নৌ দুর্গ। যা রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থিত। ক্রোনস্ট্যাড ফোর্ট, আলেকজান্ডার-১ হলো পৃথিবীর অন্যতম সুরক্ষিত দুর্গ। যা ১৮৯৯ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত দুর্গে প্লেগ এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের ওপর গবেষণাগার ছিল। এই দুর্গ তৈরির পেছনের মূল উদ্দেশ্য ছিল- রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে অবাঞ্ছিত মানুষকে দূরে রাখা। এ ছাড়াও এই দুর্গের কাছাকাছি যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কেননা এর আশপাশে প্রায় চল্লিশটি দুর্গ রয়েছে এবং তাদের মধ্যে ‘ক্রোনস্ট্যাড ফোর্ট আলেকজান্ডার-১’ সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। অতীতেও অসংখ্যবার দুর্গটি দখল করার জন্য নিরর্থক প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। তবে সম্ভব হয়নি। এটি ১২ মিটার দীর্ঘ কয়েকটি স্তরে তৈরি, যা সমুদ্রের গভীরে খনন করে নির্মিত। প্রথম স্তরটি বালির, দ্বিতীয় স্তরটি কংক্রিটের এবং তৃতীয় স্তরটি গ্রানাইট দিয়ে আবৃত। যদিও এটি এখন পরিত্যক্ত, তবে এই দুর্গে মাত্র এক দিনের জন্য ভ্রমণ করাও ভালো ধারণা নয়।
দ্য কার্দিশিয়ান্স
হলিউড সেলিব্রেটি কিম কার্দিশিয়ানের বাড়ি
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্যারিসের আকস্মিক ঘটনার পর, কিম কার্দিশিয়ান যেখানেই যান তার নিরাপত্তা বাড়িয়েছেন। তার দেহরক্ষী প্যাসকেল ডুভিয়ারের চাকরিচ্যুতির পর, তিনি নিজের বাড়ির নিরাপত্তাও বাড়িয়েছেন। বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সবার অতীতের কর্মদক্ষতা যাচাই শেষে কেবল সেরাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকার সময় অনুমতি ছাড়া কাউকে কার্দিশিয়ানের বাড়ির আশপাশে ভিড়তে দেন না। একটি কিংবা দুটি নয়, কয়েক ডজন গাড়ি নিয়ে রক্ষীরা ‘দ্য কার্দিশিয়ান্স’ হাউস-এর নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। একাধিক ‘মোশন ডিটেক্টর’ এবং ‘হিডেন ক্যামেরা’ বাড়ির চারপাশে সর্বদা নজর রাখছে। কথিত আছে, যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাড়িটির মধ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গোপন কক্ষ রয়েছে; যা বাড়িটিকে ফোর্ট নক্সের মতো নিরাপদ করে তোলে।
বাকিংহাম প্যালেস [ লন্ডন, যুক্তরাজ্য ]
পৃথিবীর বিদ্যমান রাজপরিবারের বিশাল রাজকীয় প্রাসাদ
একদিকে এটি লন্ডনের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, অন্যদিকে এটি সমগ্র রাজ্য তথা বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ অবস্থান। ‘বাকিংহাম প্যালেস’, যা ব্রিটিশ রাজপরিবারের লন্ডনের বাসস্থান। পৃথিবীর বিদ্যমান বৃহত্তম রাজকীয় প্রাসাদ। নির্মাণকালে প্রাসাদটির নাম ছিল ‘বাকিংহাম হাউস’। এটি ১৭০৩ সালে বাকিংহামের ডিউক জন শেফিল্ডের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল, পরবর্তীতে রাজা তৃতীয় জর্জ ১৭৬২ সালে তার ব্যক্তিগত বাসভবন হিসেবে এটি অধিকৃত করেন। এই রাজকীয় প্রাসাদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের একটি স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- রাষ্ট্রদর্শন ও অভিষেকে সেখানে প্রতি বছর ৫০ হাজারের অধিক মানুষ বিভিন্ন ভোজনসভায় অতিথি হিসেবে এই প্রাসাদ পরিদর্শন করতে আসেন। মূল অট্টালিকায় অভ্যর্থনার জন্য কোনো প্রশস্ত কক্ষ ছিল না। মহারানি ভিক্টোরিয়ার একটি অগ্রণী প্রচেষ্টার কারণে ১৮৫৩ সালে একটি অনন্য নৃত্যশালা (বলরুম) তৈরি হয়েছিল যা ১৮ মিটার প্রশস্ত এবং ১৩.৫ মিটার উঁচু ও ৩৬.৬ মিটার লম্বা। বাকিংহাম প্যালেসের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হচ্ছে ‘কুঈন’স গার্ডেন পার্টি’। যেখানে প্রায় ৮ হাজার অতিথি উপস্থিত ছিলেন। প্রাসাদের আশপাশের রাস্তায় প্রহরীরা প্রতিবার পরিদর্শনের পর বন্ধ করে দেয়। সব ঠিকঠাক চলছে, নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ ‘নো গো’ এলাকা নিরাপত্তায় ঢেকে ফেলে। এটি মূলত গ্রেট ব্রিটেনের সবচেয়ে সুরক্ষিত বাসভবন। গোটা প্রাসাদে নিরাপত্তারক্ষীরা অ্যালার্ম পদ্ধতিতে পাহারা দিয়ে থাকেন; যেন কোনোভাবেই রাতের প্রহরীদের চোখে ঘুম না আসে।
ম্যাক্সিমাম সিকিউরিটি ম্যানশন [ এভারগ্রিন, কলোরাডো ]
অত্যাধুনিক সুপার সেন্সর বাড়িতে ঘটতে থাকা সবকিছুর আপডেট দেয়
এই অট্টালিকাটির নামটি যেমন মনে হয়, আসলে তেমন দাম্ভিক নয়, এটি আক্ষরিক। এভারগ্রিন কলোরাডোর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়ে থাকা- ‘ম্যাক্সিমাম সিকিউরিটি ম্যানশন’ অবশ্যই আমেরিকার সবচেয়ে সুরক্ষিত বাসভবনগুলোর একটি। যা আমেরিকার সবুজে ঘেরা কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত। মোট বত্রিশ একরজুড়ে গড়ে তোলা। এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও এর নামের মতো করে সাজানো হয়েছে। ফলে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের জন্য নামটাই এক সতর্কবার্তা। গোটা বাড়িটি ছয় মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি নিরাপত্তা বলয়ে আবৃত। বাড়ির মূল দরজাটি ৬৫০ পাউন্ড ওজন বহন করে এক দুর্ভেদ্য দেয়াল তৈরি করেছে, যেটি যে কোনো বড় হামলা সামাল দিতে প্রস্তুত! বাড়ির ভিতর-বাইরে সবখানে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক ক্যামেরা। যেগুলো সার্বক্ষণিক আশপাশে নজর রাখছে। যার লাইভ ফুটেজ বাড়িটির বাসিন্দারা তাদের অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে আইফোনে দেখতে পারবেন। এ ছাড়া একটি নির্দিষ্ট সীমানার ভিতর মানুষের উপস্থিতি পেলে হিট সেন্সর সচল হয়ে যাবে। কেউ যদি বাড়ির ভিতর প্রবেশ করেও তার জন্য আকস্মিক চমক হিসেবে গ্যাসের ব্যবস্থা রয়েছে, যা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে আগন্তুককে পথভোলা করে দিতে সক্ষম। বাড়ির সুপার সেন্সর নিরাপত্তা বার্তা দেয়। বাথরুমের জলাবদ্ধতা থেকে রান্নাঘরে আগুন, দুর্ঘটনাজনিত বা ইচ্ছাকৃত যে কোনো বিষয়ে সবাইকে জানান দেয়। তবে নামের মতো বাড়ির নির্মাণশৈলী এতটা রুক্ষ নয়। চারদিক খোলামেলা থাকায় বাড়ির ভিতরে সজীবতা বিরাজ করে।
কোর্বি ফ্যামিলি রেসিডেন্স
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধনী কোর্বি পরিবারের স্বপ্নের বাড়ি
নিজে একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। তাই কোর্বি নিজের বাড়ি কীভাবে অনিরাপদ রাখবেন! তাই তো ক্যালিফোর্নিয়ার হলিউড পাহাড়ে তিনি গড়ে তুলেছেন তার স্বপ্নের বাসভবন। যা ব্যয়বহুল এবং নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা কোর্বি পরিবারের বাড়ি হিসেবে পরিচিত। বাসস্থান হলেও বাস্তবে বাড়িটি একই সঙ্গে একটি ‘সেফ হাউস’। ছয় মাস পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয়ের সরবরাহসহ একটি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাড়ির মতো কোর্বি পরিবারের বাড়িটিও ভূমিকম্প সহনীয়, যার ভিত প্রায় ৩০ ফুট গভীর। কোর্বি পরিবারের বাড়িটি পারমাণবিক এবং রাসায়নিক আক্রমণের মতো মানুষের তৈরি বিপর্যয়ও সহ্য করতে পারে। অর্থাৎ এখানে এমন সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে যেগুলো শত্রু তো বটেই, ছোটখাটো ব্যক্তিগত সেনাবাহিনীকেও প্রচণ্ড ভোগাতে পারে। কোর্বি পরিবারের বাড়িটির মূল ফটক দিয়ে প্রবেশে কোনো চাবির ব্যবস্থা নেই। পরিবর্তে আছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি। অর্থাৎ বাড়িটি সম্পূর্ণ সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। তাছাড়া চারপাশে নজর রাখার জন্য বিশেষ যন্ত্রাংশ বসানো আছে। যেগুলো ১ মাইল দূরে অবস্থান করা সশস্ত্র ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করতে পারে। অন্যান্য বাড়ির মতো এই বাড়িটিকেও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা দেওয়া হয়।
বিল গেটস হোম
নিরাপত্তাবলয়ে ঢাকা ধনকুবের বিল গেটস-এর বাড়ি
মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস; যাকে দেখতে বেশ নম্র, ভদ্র আর মিশুক মনে হলেও তার বাড়ির দরজা দিয়ে ঢুকে যখন-তখন তার সঙ্গে হাত মেলানোর সুযোগ নেই। কারণ তিনি অনেক বেশি নিরাপত্তাবেষ্টিত একটি বাড়িতে বসবাস করেন; যা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সম্পদগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিত। পুরো বাড়িটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত। জানাডু-২.০ সিরিজের বিশেষ ডিজাইনের তৈরি এমন বাড়ি পৃথিবীতে একটাই রয়েছে। সফটওয়্যারের মাধ্যমে পুরো বাড়ির তাপমাত্রা, আলো-বাতাস, আর্দ্রতাসহ অসংখ্য কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিল গেটসের বাসস্থানের আশপাশের এলাকাজুড়ে নানা গাছের সারি। যা লুকিয়ে থাকা ফটোগ্রাফার এবং পাপারাজ্জিদের কাছ থেকে তাদের গোপনীয়তা দেয়। আর বিদ্যুতায়িত বেড়ার পাহাড় ডিঙিয়ে কেউ আসতে চাইবে না। বাড়ির চারদিকে মানুষ আর ক্যামেরা শনাক্তকারী যন্ত্র বসানো আছে। ২০০৪ সালে এই বাড়িতে ন্যাশনাল গভর্নরস অ্যাসোসিয়েশনের সম্মানে এক পার্টির আয়োজন করা হয়। যেখানে অতিথিরা লেকের পথ ধরে স্পিড বোটে করে আসেন।
দ্য জম্বি বাঙ্কার
লন্ডনের ‘দ্য জম্বি বাঙ্কার’ হলো একটি প্রতিরক্ষামূলক ভবন
পৃথিবী এখনো জম্বিদের (ভূত) আক্রমণের শিকার হয়নি কিন্তু এই গ্রহের কিছু মানুষের আয়োজন দেখলে মনে হবে তারা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন! পৃথিবীতে উল্কাপিণ্ডের আঘাত কিংবা জম্বিদের আক্রমণ হলে একটি বাড়িতে সম্পূর্ণ নিরাপদে থাকা যাবে। যা লন্ডনে অবস্থিত। বাড়িটির গঠন চারকোণা আকৃতির, নেই কোনো শৈল্পিকতার ছোঁয়া, দেখতে অনেকটা কেকের মতো। মূলত বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত বাড়িটি ‘দ্য জম্বি বাঙ্কার’ নামে পরিচিত। এর নকশাও বিশেষভাবে করা, যা নির্মাণে লোহার পুরু প্রতিরক্ষামূলক ঢালসহ শক্তিশালী কংক্রিট ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি জানালাগুলো শক্ত কংক্রিটের শিট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রবেশ এবং প্রস্থানের একমাত্র পন্থা হলো- ড্রব্রিজ ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে আসা-যাওয়া করা যাবে। যদি আপনাকে বের হতে হয়, তবে ড্রব্রিজ ব্যবস্থার মাধ্যমেই বের হতে হবে, যা স্পষ্ট করে যে স্থপতিরা কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে বাড়িটির নিরাপত্তা ঝুঁকি নেননি। নিরাপত্তায় আবৃত ভবনটি নান্দনিক নয়, কিন্তু জম্বিরা যখন আসবে তখন তারা কি বাড়ির সৌন্দর্য দেখতে আসবে।
ফেয়ার ফিল্ড স্টেট
আমেরিকার অন্যতম ধনকুবের ইরা রেনার্ডের বাড়ি
অবসর যাপনের অন্যতম কেন্দ্র- ‘ফেয়ার ফিল্ড স্টেট’। যা ‘গ্রেট ফেয়ার ফিল্ড স্টেট’ নামে বেশি পরিচিত। নিউইয়র্কের কয়েক হাজার ধনাঢ্য পরিবারের জন্য এটি গ্রীষ্মের ছুটি উদযাপনের ঐতিহ্যবাহী স্থান। তবে এখানে প্রবেশের জন্য অবশ্যই আমন্ত্রিত অতিথি হতে হবে। ‘ফেয়ার ফিল্ড স্টেট’-এ গ্রীষ্মের ছুটিতে প্রায় ১৩ দিনের বিশাল এক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে কৃষি, বিনোদন, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি প্রদর্শনী। এ ছাড়াও থাকে মিডওয়ে রাইড, কনসেশনার এবং কনসার্টসহ বিশাল আয়োজন। এটি আমেরিকার প্রাচীন এবং বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় মেলাগুলোর অন্যতম, যেখানে বছরের ১০ লাখেরও বেশি দর্শকের আগমন ঘটে। রাষ্ট্রীয় আয়োজন হলেও এই বাড়ির মালিক আমেরিকার ধনকুবের ইরা রেনার্ড। বাড়িটি নির্মাণে তিনি প্রায় ২৪৮ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন। শিল্পের প্রতি বিশেষ ঝোঁক থাকায় রেনার্ড বাসস্থানটি সাজিয়েছেন সংগৃহীত শিল্পকর্মে। এখানে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের চিত্রকর্ম রয়েছে, তাই এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও তো অন্য সবার চেয়ে আলাদা হবেই। এখানকার প্রবেশদ্বার বিশেষভাবে তৈরি, এমনকি জানালার কাচগুলোও বুলেটপ্রুফ। তাছাড়া বিশালাকার বাড়িতে পর্যাপ্ত ক্যামেরা বসানো আছে। সেগুলো পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তায় দক্ষ লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।