দেশসেরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় বসুন্ধরা শুভসংঘ দিনে দিনে স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থীদের প্রত্যয়, আশা ও সাহসের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সৌন্দর্যে উদ্বেল মানবিক ভোর হয়ে বসুন্ধরা শুভসংঘ ধরা দেয় দরিদ্র পরিবার থেকে আসা হাজারো শিক্ষার্থীর কাছে। এক নতুন জীবনের আহ্বান হয়ে তাদের কাছে পৌঁছে যায়। আর্থিক অসচ্ছলতা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্নকে অঙ্কুরেই বিনাশ করে।
সেখানে বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তি আলোকবর্তিকার মতো কাজ করছে। এটি কেবল আর্থিক সহায়তা নয়, বরং একটি সুস্থ ও শিক্ষিত সমাজ গঠনের দীর্ঘমেয়াদি প্রয়াস। সারা দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ানোর এমন উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২০ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন সহজ করতে পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
তাঁদের শিক্ষার পথকে মসৃণ করতে প্রতি মাসে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে পড়ালেখার খরচ। এই সহায়তা পেয়ে শিক্ষার্থীরাও আনন্দিত ও গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। বৃত্তি পাওয়া সেসব শিক্ষার্থীর কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অনুভূতি তুলে ধরা হলো-
মায়া আক্তার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
বসুন্ধরা শুভসংঘ স্বপ্নপূরণের এক নতুন দিশা। ‘শুভ কাজে সবার পাশে’—এটি শুধু একটি স্লোগানই নয়, বরং একটি বিশ্বাস এবং আস্থার জায়গা।
এর বাস্তব উদাহরণই বোধ হয় আমি। আমাদের সবার জীবনেই অনেক প্রতিকূলতা থাকে। সেই প্রতিকূলতাকে জয় করেই জীবন নামের খরস্রোতা নদীটি পাড়ি দিতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জীবনের এই পর্যায়ে আসতে অনেক প্রতিকূলতা পার করতে হয়েছে, যদিও আমার জীবনে সফলতার পাল্লাটা সামান্যই ভারী।
কিন্তু সামনে আরো অনেকটা পথ বাকি আছে, যা অতিক্রম করতে দানবের বেশে শত প্রতিকূলতা এসে না যেন পথ আঁকড়ে দাঁড়ায়। এসব সীমাহীন ভাবনায় যখন আমি নিমজ্জিত, তখনই বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার ভগ্নপ্রায় স্বপ্নগুলো দৃঢ় করে। আমার স্বপ্নপূরণের সারথি হয়ে উৎসাহ প্রদান করে। আমার মৃতপ্রায় ইচ্ছাগুলোতে প্রাণের সঞ্চার ঘটায়। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। এরপর যখন মাকে আঁকড়ে ধরে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখনই মাকেও হারিয়ে ফেলি। ভাগ্য যেন আমাকে দ্বিতীয়বার ভেংচি কাটল। আমরা যেহেতু দুই ভাই-বোন, স্বাভাবিকভাবেই বড় ভাইকে কাঁধ থেকে বইয়ের ব্যাগ সরিয়ে তুলে নিতে হলো সংসারের দায়িত্ব, আমাকে বড় করে তোলার দায়িত্ব। ভালো স্টুডেন্ট হয়েও ভাইয়াকে পড়ালেখা বাদ দিতে হলো। টানাটানির সংসারে ভাইয়ার অক্লান্ত পরিশ্রম আর ত্যাগের কারণে আজ আমি ভার্সিটি পর্যন্ত আসতে পেরেছি। এখানকার খরচ ভাইয়ের পক্ষে আর চালানো সম্ভব হচ্ছে না। মাথায় তাঁর অনেক ঋণের বোঝা। কিভাবে পড়ার খরচ জোগাড় করব? আশপাশে টিউশনি না পাওয়ায় একরকম বাধ্য হয়ে অনেক দূরে টিউশনি নিলাম। রাতে যাতায়াতের অসুবিধা, টিউশনিও প্রায় যায় যায় অবস্থা। দিনে দিনে যখন সব স্বপ্নকে চোখের সামনে ভেঙে যেতে দেখছি, লক্ষ্যপূরণের পথটিকে যখন হারিয়ে ফেলছি, তখনই সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমার সমস্যা নিরূপণ করতে পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ। প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পেতে শুরু করলাম, মাথা থেকে অনেক চিন্তাই কমে লাগল। এখন আর মাসের শুরুতেই মাসের শেষের দিকের যোগ-বিয়োগের হিসাব কষতে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, আমি যেন লক্ষ্যপূরণের রাস্তায় ফিরে এসেছি। বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। সর্বদা বসুন্ধরা শুভসংঘকে নিজের পরিবার ভেবে যাব।
ওসমান গনি, আইন বিভাগ
আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবা ভ্যানচালক, যিনি আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর সীমিত আয় দিয়ে আমাদের সংসার চালানোই কঠিন, সেখানে আমার উচ্চশিক্ষার খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল না থাকায় প্রতি মাসে আমার থাকা-খাওয়ায় অনেক টাকা খরচ হয়, যা আমাকে টিউশনি করে জোগাড় করতে হতো। ফলে আমি পড়াশোনা করার পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছিলাম না। এই অবস্থায় বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে পাওয়া মাসিক বৃত্তি আমার শিক্ষাজীবনে আশীর্বাদের মতো এসেছে। এই বৃত্তি শুধু আমার বই-খাতা বা অন্যান্য শিক্ষাসামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে সহায়তা করেনি, বরং আমার মানসিক চাপ অনেকটাই লাঘব করেছে। এখন আমি আরো মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারছি। আমার স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সাহস পাচ্ছি। বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি আমি অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা যেভাবে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়। ভবিষ্যতে আমি একজন সফল নাগরিক হয়ে এই সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করতে চাই। একদিন আমিও কারো জন্য এমন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে পারব। আপনাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা।
মো. রাসেল সেখ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
আল্লাহ তাআলার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা, তিনি আমাকে বসুন্ধরা শুভসংঘের মতো একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার তৌফিক দান করেছেন। আমরা যারা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য আসি, তখন আমাদের নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের স্বপ্নপূরণের সব থেকে বড় বাধা হচ্ছে আর্থিক দুরবস্থা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আমাকে প্রতিনিয়ত চিন্তা করতে হতো কিভাবে পড়ালেখার খরচসহ নিত্যদিনের ব্যয় চালাব। আমার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটে যে শুরুর দিকে আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ভর্তি হওয়া সত্ত্বেও পড়ালেখা ছেড়ে চলে যেতে হয়। তার পরও নানা বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়ে আমি পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। বাবা প্রতিনিয়ত ধার, ঋণ করে আমার জন্য টাকা পাঠাতেন। তাঁর চিকিৎসা না করে আমাকে টাকা দিতেন। বাবার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতি হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে তিনি জানান, আমার খরচ পাঠাতে হাজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে পড়ছেন। আমি যেন নিজের ব্যবস্থা নিজে করি। কিন্তু আমার চলার জন্য কোনো ব্যবস্থা করতে পারিনি। হাল ছেড়ে দিই। মনে হয় পড়ালেখা এখানেই শেষ। সেই সময় আমার কাছে কল্যাণ হয়ে আসে বসুন্ধরা শুভসংঘ। আমার পড়ালেখার খরচ বহনের জন্য মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেয়। আমি বসুন্ধরা শুভসংঘকে কিভাবে ধন্যবাদ জানাব, সেই ভাষা নেই। বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে দেওয়া বৃত্তি আমার জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমি আবার স্বপ্ন দেখি পড়াশোনা শেষ করে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাব। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার জীবনে আলার দিশারি হয়ে এসেছে। তাদের এমন দুঃসাহসিক উদ্যোগ আমার মতো অসংখ্য শিক্ষার্থীর স্বপ্নপূরণের আর্থিক বাধা দূর করে শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে।
বাশির শাহরিয়ার, বাংলা বিভাগ
আমার ভার্সিটি পর্যন্ত আসা জীবনসংগ্রাম কখনোই সুখকর ছিল না। আমি নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। পরিবারে আমরা তিন ভাই-বোন। তিনজনই পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত। বাবা আমাদের পরিবারে একমাত্র উপার্জন করেন। মা গৃহিণী এবং আমার অসুস্থ দাদি আমাদের সঙ্গেই থাকেন। আমার অনার্স পড়ুয়া ভাইকে টাকা দেওয়া এবং ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া ছোট বোনকে পড়াশোনার খরচ দেওয়া আবার অসুস্থ দাদির চিকিৎসা। সব মিলিয়ে আমাদের পরিবার প্রতি মাসে অনেক ঋণ হয়ে যায়। অ্যাডমিশনের জন্য কোচিং করারও সুযোগ হয়নি। বাড়িতে বসে নিজের থেকে পড়েই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাই এবং ভর্তি হই। কিন্তু ঢাকায় এসে দেখেছি বাস্তবতা আরো অনেক কঠিন। কোনো হল না থাকায় মেসে উঠতে হয়। একদিকে বাসাভাড়া, অন্যদিকে খাওয়াদাওয়া, বই-খাতা কেনাসহ প্রতি মাসে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। পুরান ঢাকার মতো একটি জায়গায় টিউশনি পাওয়াও অনেক কষ্টকর। তবে একটি টিউশনি জোগাড় করি, যেখানে সপ্তাহে পাঁচ দিন পড়াতে হয়, কিন্তু প্রতি মাসে মাত্র এক হাজার ৫০০ টাকা দিত। পরিবার থেকে খুব সামান্য পরিমাণে টাকা দিত, যা দিয়ে চলা একেবারেই অসম্ভব। তাই দিনে দুই বেলা খেয়ে থাকতাম। এক বেলার টাকা কম লাগত। আগে থেকেই বসুন্ধরা শুভসংঘের নানা কাজে যুক্ত ছিলাম। যখনই আমাকে প্রতি মাসে বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে বৃত্তি দেওয়া শুরু হলো, তখন থেকে কিছুটা ভালোভাবে চলতে পারছি। বসুন্ধরা শুভসংঘকে যত ধন্যবাদ দেব, তত কম হয়ে যায়। তবু অন্তরের অন্তস্তল থেকে বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করলেই নয়। অনেক অনেক ধন্যবাদ বসুন্ধরা শুভসংঘকে।
জান্নাতুল বুসরা মোনালিসা, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ
জীবনের পথে অগ্রসর হতে আমাদের সবারই কিছু সহায়তার প্রয়োজন হয়। কারো পাশে দাঁড়ানো, একটুখানি হাত বাড়িয়ে দেওয়াঅনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারে। আমি সৌভাগ্যবান, কারণ আমার এই যাত্রায় পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বৃত্তিপ্রাপ্তি আমার কাছে শুধু একটি আর্থিক সহায়তা
নয়, এটি একটি স্বীকৃতি, একটি অনুপ্রেরণা এবং ভবিষ্যতের প্রতি আমার দায়বদ্ধতার প্রতীক। যদি ইচ্ছাশক্তি এবং পরিশ্রম থাকে, তবে সমাজও আপনার পাশে দাঁড়ায়। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। বসুন্ধরা
শুভসংঘের এই মহান উদ্যোগ শুধু আমার মতো শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন গড়তে সাহায্য করছে না, বরং একটি দায়িত্বশীল সমাজ
গঠনের পথে আলো ছড়াচ্ছে। এমন সুযোগের জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, এই আস্থা ও
সহায়তার মর্যাদা রক্ষা করব। নিজেকে একজন সৎ, শিক্ষিত ও দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকব। আন্তরিক ধন্যবাদ বসুন্ধরা শুভসংঘকে আমার স্বপ্নযাত্রার সহযোগী হওয়ার জন্য।
বিথী রাণী কুন্ড, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ
ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ আমার বাবা একজন দরিদ্র কৃষক, মা গৃহিণী। বাবার স্বল্প আয় দিয়ে আমাদের পড়াশোনার খরচ চালাতে হতো। তবে এই লড়াইয়ে সব সময়ই কাউকে না কাউকে পাশে পেয়েছি। কলেজজীবন শেষ করে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার লড়াই। ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুযোগ হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগে। কয়েকজনের সাহায্য ও সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কাজ শেষ হয়। এরপর শুরু হয় ঢাকা শহরে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার লড়াই। সম্প্রতি বাবার ব্রেইন টিউমার অপারেশন হয়। ঈশ্বরের কৃপায় বাবা সুস্থ আছেন, কিন্তু ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। আগে যেটুকু আয় করতেন, সেটুকুও এখন আর হয় না। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতাম। এই অবস্থায় আমি কিভাবে সব কিছু ম্যানেজ করে পড়াশোনা চালিয়ে যাব বুঝতে পারছিলাম না। তারপর বাড়িতে টাকা পাঠাতে হবে, যেহেতু বাবা কিছু করেন না, সংসারের হাল আমাকেই ধরতে হবে। মনে হচ্ছিল আমার স্বপ্নপূরণ হয়তো আর হলো না! কিন্তু না, বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার স্বপ্ন শেষ হতে দেয়নি। এই খারাপ সময়ে তারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মাসে বসুন্ধরা শুভসংঘ আমাকে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে পড়াশোনার খরচ দিচ্ছে। এই বৃত্তিটা না পেলে হয়তো আমার পড়ালেখা থেমে যেত। আমার স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে পাশে থাকার জন্য বসুন্ধরা শুভসংঘ ও বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। তবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ প্রকৃত অর্থে সেদিনই হবে, যেদিন আমিও কারো স্বপ্নপূরণের সঙ্গী হতে পারব।
সাবিনা ইয়াসমিন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
আমার প্রাথমিক স্কুল জীবন ভালোই কেটেছে। মাধ্যমিক থেকেই শুরু হয় জীবনসংগ্রামের গল্প। বাবা একজন কৃষক ছিলেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আম্মু খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের সব কাজ আমাকেই করতে হতো। আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় ক্লাস সেভেন থেকে টিউশনি করতাম। ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ায় দরিদ্র দেখে বিদ্যালয়ে কোনো ফি দিতে হতো না। আব্বুই আমাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে স্ট্রোক করে আব্বু মারা যান। আব্বু মারা যাওয়ায় যেন আমরা মহাসাগরে পড়ে যাই। এই পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া আমাদের সাহায্য করার কেউ থাকল না। গ্রামের মানুষরূপী কতগুলো অমানুষের বিষাক্ত কথা, আচরণ, আর্থিক সংকট, মায়ের অসুস্থতা, নিজের পড়াশোনা, ছোট ভাই-বোনদের পড়াশোনা—সব মিলিয়ে পাগলপ্রায় অবস্থা হয় সবার। এর মধ্যেই আমি এসএসসি পরীক্ষা দিই এবং জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। তখন চারদিক থেকে বিয়ে দেওয়ার চাপ আসছিল, কিন্তু আমার স্বপ্ন পড়াশোনা করব। সেই সামর্থ্য ছিল না। তার পরও সব কিছু উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছায়ই কলেজে ভর্তি হই। খরচ চালানোর জন্য এক হাজার টাকার একটি টিউশনি করতাম। অন্য মানুষের বাসায়ও থেকেছি। স্যারদের রিকোয়েস্ট করে ফ্রি প্রাইভেট পড়তাম। এভাবে এইচএসসিতেও জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পর আমার পড়ার কোনো উপায়ই ছিল না। সমিতি থেকে ঋণ উঠিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হই। ভাবছিলাম, কোনো ইনকাম সোর্স পাব, কিন্তু হতাশ হলাম। একটি টিউশনি পর্যন্ত পাই না। এক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে বসুন্ধরা শুভসংঘের খোঁজ পেয়ে বৃত্তির আবেদন করি। আমি তাহাজ্জুত পড়ে পর্যন্ত দোয়া করেছি, যেন অন্তত একটি ব্যবস্থা হয়। আল্লাহ আমাকে বসুন্ধরা শুভসংঘের দ্বারা এই সহযোগিতা করছেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি হাজারবার। বাড়ি থেকে এক টাকাও আনতে পারি না। বাসাভাড়ার টাকা, খাওয়াদাওয়া, পরীক্ষা ফি, সেমিস্টার ফি—এগুলো তো আছেই। এখানে টিউশনি পাওয়া যে কত কঠিন বলার বাইরে, পেলেও নামমাত্র স্যালারি দেয়। বসুন্ধরা থেকে বৃত্তি পেয়ে আশা জাগল অন্তত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারব। তা না হলে পড়াশোনা বন্ধ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এবং শুভসংঘের আরো প্রসার কামনা করছি। আজীবন বসুন্ধরা শুভসংঘের সঙ্গে কাজ করব, ইনশাআল্লাহ।
আবু তালহা বিশ্বাস, ইতিহাস বিভাগ
মা-বাবা, ভাই ও দুই বোনসহ ছয়জনের পরিবার আমাদের। আমরা চার ভাই-বোন ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস বাবা, যিনি নিতান্তই একজন কৃষক। বাবার আয় দিয়ে পরিবারের খরচ চালানোর বাইরে আমাদের পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব ছিল না। এর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে ঢাকায় চলে আসি। খরচ আরো বেড়ে যায়। ঢাকায় এসে টিউশনি নেই, হল নেই। এদিকে বাবা পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। মাঝে মাঝে বাবা বলেন, ‘এবার নিজের মতো কিছু একটা করো।’ নতুন পরিবেশে পড়ালেখার চাপ, টাকার চিন্তা—সব মিলিয়ে একটা হতাশার মধ্যে পড়ে যাই। মাঝে তো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বাড়ি চলে যাব। এরই মধ্যে হঠাৎ বসুন্ধরা শুভসংঘ যেন আশীর্বাদস্বরূপ আবির্ভূত হয়। বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তি আমার শিক্ষাজীবনের নতুন দুয়ার উন্মোচন করে। শিক্ষাবৃত্তিটা পাওয়ায় পরিবার যেমন চাপমুক্ত হয়েছে, আমিও নিশ্চিন্তভাবে পড়ালেখা করতে পারছি। এ জন্য বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বসুন্ধরা শুভসংঘ যেন ‘শুভ কাজে সবার পাশে’ স্লোগান সামনে রেখে আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াতে পারে, সেই দোয়া করি।
মারুফা ইয়াসমিন, নৃবিজ্ঞান বিভাগ
আজ থেকে দুই বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম। বাড়ি লালমনিরহাট জেলার ছোট্ট একটি গ্রামে। বাবা পেশায় একজন অটোচালক। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জার্নিটা একরকম যুদ্ধই ছিল আমার জন্য। সবার মতের বাইরে গিয়ে অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার পর কয়েক মাস আব্বু টাকা পাঠালেও পরে আর আব্বুর পক্ষে আমাকে পর্যাপ্ত টাকা পাঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। টিউশনিও পাচ্ছিলাম না। একসময় মনে হয়েছিল, পড়াশোনাা বাদ দিয়ে বাড়িতে চলে যাই। ওই সময় আমি একটি টিউশনি পাই। সেটি দিয়েই কষ্ট করে থাকা-খাওয়া চালিয়ে যাই। গত বছর ডিসেম্বরে আমাকে জানিয়ে দেওয়া হয় টিউশনিটি আর থাকবে না। কারণ তারা ঢাকা থেকে চলে যাবে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। দুই বছরে অনেক টিউশনি খুঁজেছি কিন্তু একটি ছাড়া আর পাইনি। এখন তাহলে কোথায় পাব—এই চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। কোনো রকমে বাড়ি থেকে আবার ঢাকায় আসি, কিন্তু মাথায় হাজার চিন্তা। এমন সময় মহান আল্লাহর রহমত হিসেবে আমার পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ। তারা আমাকে প্রতি মাসে বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেয়। এই বৃত্তি যে আমার কতটুকু উপকার করেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। বাবা এখন প্রায়ই অসুস্থ থাকেন, যার কারণে আগের সেই সামান্য আয়টুকুও হয় না। আল্লাহর রহমতে আমি একটি টিউশনিও পেয়েছি। এখন আমি বাড়িতেও কিছু টাকা দিতে পারি। বসুন্ধরা শুভসংঘের এই বৃত্তি আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থীর চিন্তা দূর করেছে। পাশাপাশি মানুষের বিপদে বসুন্ধরা শুভসংঘের সাহায্য করার ব্যাপারটি আমার অনেক ভালো লেগেছে। তারা যেভাবে দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তাদের কাজ দেখে আমি নিজেও এখন মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। জীবনে যা-ই করি না কেন, বসুন্ধরা শুভসংঘের সঙ্গে সব সময় থাকতে চাই এবং কাজ করতে চাই। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার এমন এক বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে, যেই বিপদের মুখে হয়তো আমার পড়াশোনাা বন্ধ হয়ে যেত।
রীতু রায়, ইতিহাস বিভাগ
আমি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার ৯ বছর বয়সের সময় বাবা মারা যান। অনেক কষ্ট করে মা আমাকে এত দূর পর্যন্ত পড়ালেখা করতে উৎসাহ দিয়েছেন। তাঁর অনুপ্রেরণা না থাকলে আমার এই পর্যন্ত আসা হতো না। সব সময় মায়ের কষ্টটা বুঝতে চেয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ার পর মায়ের পক্ষে ঢাকা শহরে থাকার জন্য এতগুলো টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। টিউশনি অনেক সময় থাকে আবার থাকে না। এই সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বসুন্ধরা শুভসংঘ আমাকে বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেয়। বৃত্তি প্রদান করে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এখন আমি নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করতে পারছি। এমন করে পাশে দাঁড়ানোর জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
জামাল হোসেন, লোকপ্রশাসন বিভাগ
আমি অন্তরের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি, যারা আমাদের পড়াশোনাকে সহজ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জীবনে আশীর্বাদস্বরূপ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য এই বৃত্তি কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সমস্যা প্রকট। হল না থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে বাইরে থাকতে হয়, যা একদিকে যেমন ব্যয়বহুল, অন্যদিকে পুরান ঢাকায় টিউশনি পাওয়াও বেশ কষ্টসাধ্য। অনেক সময় টিউশনির বেতন পর্যাপ্ত হয় না, যার ফলে আমাদের পরিবার থেকে আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এই কঠিন বাস্তবতায় বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তি আমাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এই বৃত্তি শুধু অর্থনৈতিক সহায়তা নয়, বরং এটি আমাদের মনের ভেতরের দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তা দূর করে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।