মধ্যপ্রাচ্যে ১২ দিন ধরে চলা ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ শেষ হয়েছে একটি অনিশ্চিত যুদ্ধবিরতিতে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় কার্যকর হয়। যদিও ট্রাম্প, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ইরানের নেতৃত্ব—সবাইই এই বিরতি নিজেদের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরছেন, কিন্তু বাস্তবে কি কেউ জয়ী হতে পেরেছে?
কীভাবে শুরু হলো যুদ্ধ?
গত শনিবার গভীর রাতে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলের অনুরোধে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়—ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহানে। ট্রাম্প এই হামলাকে ‘সম্পূর্ণ ধ্বংসাত্মক’ বলে দাবি করেন। এর জবাবে সোমবার ইরান কাতারের আল-উদেইদে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
পরিস্থিতি তখন পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বৃহৎ যুদ্ধে রূপ নিতে যাচ্ছিল। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্প ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি’র ঘোষণা দেন। তিনি Truth Social-এ লিখেন, “এই যুদ্ধ কয়েক বছর চলতে পারত, কিন্তু আমরা তা থামিয়েছি।”
যুদ্ধবিরতির মধ্যেই আবার হামলা
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েল দাবি করে, ইরান থেকে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তার ভূখণ্ডে প্রবেশ করে, যদিও সেগুলো ভূপাতিত হয়। এরপর ইসরায়েল পাল্টা হামলায় তেহরানের কাছে একটি রাডার স্টেশন ধ্বংস করে। ট্রাম্প এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “ওরা জানেই না কী করছে!” ইরান অবশ্য ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সকাল সাড়ে ১১টায় যুদ্ধবিরতি পুনর্বহাল হয়।
ইসরায়েল কী অর্জন করল?
ইসরায়েল এই প্রথম তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সরাসরি হামলা চালালো। নেতানিয়াহু দাবি করেন, এটি ছিল ‘অগ্রিম আত্মরক্ষামূলক হামলা’। আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখেও ইসরায়েল দেখিয়েছে যে, তারা দীর্ঘ দূরত্বে জটিল মিশন চালাতে সক্ষম। এছাড়া, তারা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যক্ষভাবে এই আক্রমণে যুক্ত করতেও সক্ষম হয়েছে, যা অতীতে হয়নি।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত?
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ধ্বংস করেছে। তবে স্বাধীন উৎস থেকে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, “ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণে মাটির নিচে তদন্ত প্রয়োজন।” ইরানের অ্যাটমিক এনার্জি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামী জানান, “আগাম প্রস্তুতির ফলে উৎপাদন বা সেবায় ব্যাঘাত ঘটবে না।”
আবার হামলার আশঙ্কা?
যুদ্ধবিরতি হয়েছে, শান্তিচুক্তি নয়। ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সংকেত দিয়েছে। ২৪ জুন ইরানের পার্লামেন্ট আইএইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধের বিল অনুমোদন করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কূটনৈতিক সমাধানের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলো এখন ইরানের শেষ ভরসা, কারণ রাশিয়ার ওপর আস্থা করা যাচ্ছে না। তবে ইসরায়েল নতুন কোনো চুক্তিকে মান্য করবে না, এবং ইরানও অতীতে ট্রাম্পের চুক্তি ভাঙা ও বোমা হামলার পর বিশ্বাস রাখতে নারাজ।
পরবর্তী সংঘর্ষ কেবল সময়ের অপেক্ষা?
যুক্তরাষ্ট্র যদি কূটনৈতিক পথে না ফেরে এবং ইরান তার সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখে, তবে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা থেকেই যায়। এবং সেই সংঘাতে আবারও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে।
সূত্র: আল জাজিরা
লেখক: জন টি. সারোপুলাস
অনুবাদ: আশিক উল বারাত