ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের দুই পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন ৯ জন। আহতরা হলেন, মনির হোসেন (৩০) মহিদুল ইসলাম (৩৫), দিদার (৪৪), জসিম (৪০), জুয়েল (৪৫), ওবায়দুল (২৮), আজিজ (৪৬), উজ্জ্বল (২১) ও সোহাগ (২৫)। তবে এদের মধ্যে মনির হোসেন ও মহিদুল ইসলাম গুরুতর আহত।
গতকাল দিনব্যাপী নগর ভবনের সম্মুখে কয়েক দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সংবাদ সংগ্রহের সময় এক সাংবাদিককে ছুরি দেখিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এদিকে ইশরাকপন্থিদের নগর ভবনে অবস্থানের কারণে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আতঙ্কে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নগর ভবনে এসে আবার চলে যান। এতে সেবাগ্রহীতারাও পড়েন ভোগান্তিতে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে গণমাধ্যমকে ইশরাক হোসেন বলেন, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা স্বৈরাচারের দোসর। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি। সরেজমিন দেখা যায়, দুপুর দেড়টার দিকে শ্রমিক দলের নেতা আরিফুজ্জামান প্রিন্সের অনুসারী সন্দেহে নগর ভবনের এক কর্মীকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ইশরাকের অনুসারীরা সিটি করপোরেশনের প্রশাসন শাখার কম্পিউটার অপারেটর শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে পেটাতে থাকেন। এ সময় পুলিশ এসে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে পুলিশের কাছে ওই ব্যক্তিকে দিতে রাজি হননি ইশরাক অনুসারীরা। পরে নগর ভবনে আগত আরেক ব্যক্তিকে আরিফুজ্জামান প্রিন্সের অনুসারী সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হয়। পুলিশ এ দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।
এ বিষয়ে আরিফুজ্জামান প্রিন্স বলেন, ‘ইশরাক হোসেন নগর ভবনে সেবা চালু করার ঘোষণা দেওয়ার পরও বহিরাগত কিছু লোকজন প্রতিদিন এসে মহড়া দিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের হুমকি দিচ্ছেন। নগর ভবনে প্রবেশে বাধা দিচ্ছেন তারা। বিভিন্ন দপ্তর থেকে আন্দোলনে ছিলেন না এই অজুহাতে বের করে দেওয়া হয়েছে। তাই আজ আমরা কর্মচারীরা একত্রে নগর ভবনে প্রবেশ করার সময় অতর্কিত হামলা চালানো হয়। তবে আরিফ চৌধুরী বলেন, অন্যান্য দিনের মতো আজও তারা শান্তিপূর্ণভাবে নগর ভবনে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু বহিরাগতরা নগর ভবনে এসে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের ৯ জনকে গুরুতর আহত করেছে।
এদিকে সংঘর্ষের ছবি আর ভিডিও করার সময় সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন ইশরাক সমর্থকরা। নাগরিক টেলিভিশনের রিপোর্টার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শিশিরের মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে সব ছবি ও ভিডিও ডিলিট করে দেন ইশরাকের অনুসারীরা। এ সময় তাকে হেনস্তা করতে দেখা গেছে। আসাদুজ্জামান শিশির বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় মারধরের ভিডিও করতে গেলে মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে সব ভিডিও ও ছবি ডিলিট করে ছুরি দেখিয়ে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এনটিভির রিপোর্টার নাজিবুর রহমান বলেন, আমার ক্যামেরাম্যানসহ আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। যেন ভিডিও ধারণ করা না হয়।
নগর ভবনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন আরিফ চৌধুরী ও শ্রমিক নেতা আরিফুজ্জামান প্রিন্স। শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নগর ভবনের সামনে মঞ্চে আন্দোলনে সংহতিও জানান তারা। তবে প্রিন্সকে শেষের দিকে আন্দোলনে দেখা যায়নি। গতকাল দুপুরের দিকে শ্রমিক নেতা আরিফুজ্জামান প্রিন্স ফের ইশরাকের আন্দোলনে আসার সময় নগর ভবনে তাদের ওপর হামলার চালানো হয়েছিল। অন্যদিকে গতকাল ইশরাকপন্থিদের সংঘর্ষে নগর ভবনে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসে এসে আবার চলে যায়। কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কম থাকায় সেবাপ্রত্যাশীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, একটা অজুহাত দিয়ে কখন যে আমাদের ওপরে হামলা হয়। কি করব মানসম্মান আছে! এরপর জীবনও ঝুঁকিপূর্ণের মধ্যে পড়ে যায়। পরিবেশ ভালো না। তাই চলে গেলাম।