বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী নির্বাচন সবচেয়ে কঠিন হবে। এ নির্বাচন ঘিরে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবে জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করা গেলে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা সম্ভব। তিনি বলেন, এখন বিএনপির সুসময় চলছে। এই সুসময়ে অনেক ঘুঘু কাছে ভিড়বে। এই সুসময়ের ঘুঘুদের সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। একই সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থেকে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। গতকাল নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা এলাকায় নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে দীর্ঘ ১৫ বছর পর জেলা বিএনপির এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
দলের এই শীর্ষনেতা বলেন, বিএনপির দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা যাতে বাস্তবায়ন না হয়, দেশ যাতে গণতান্ত্রিক অবস্থায় ফিরে আসতে না পারে- সেজন্য ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও সরকারি প্রতিটি সেক্টর ধ্বংস করে রেখে গেছে। দেশ পরিচালনার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সক্ষম হবে বিএনপি। এর আগে দুপুরে নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম। জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম রেজুর সভাপতিত্বে সম্মেলনে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এএইচএম ওবায়দুর রহমান চন্দন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সামসুজ্জোহা খান এবং বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও দ্বিবার্ষিক সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক রেজাউল করিম বাদশাসহ কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। সম্মেলন শেষে বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচিত করার কথা। জেলার ১১টি উপজেলা কমিটি ও তিনটি পৌর কমিটির ১৪১৪ জন কাউন্সিলরের ভোটে নির্বাচিত হবেন নতুন নেতৃত্ব। শীর্ষ তিনটি পদে মোট ২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পর বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমি বসেছিলাম। তখন আপনাদের বলেছিলাম, আমাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই ভাবছে একটি প্রতিপক্ষ তো আর মাঠে নেই, আগামী নির্বাচন কি আর কঠিন হবে। আমি তখন বলেছিলাম আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন হবে। এক বছর আগে আমি বলেছিলাম অদৃশ্য শক্তি বিভিন্নভাবে কাজ করছে, বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আজকে কি আমার কথার অর্থ বুঝতে পারছেন আপনারা? আমার কথার অর্থ অনুধাবন করতে পারছেন? কিন্তু যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন আগামী দিনে আমরা ইনশাল্লাহ সফল হব। যদি বিএনপি নামক পরিবারটির সব সদস্য ঐক্যবদ্ধ থাকে। তারেক রহমান বলেন, বিএনপিতে মানুষ আস্থা রাখতে চায়। যে কাজ করলে দেশ ও মানুষ উপকৃত হবে তা বিএনপি করছে।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারের পতনের পর একটি অধ্যায় শেষ হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্ব। জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে দ্বিতীয় পর্ব। আর জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে নির্বাচন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে নির্বাচনের সম্ভাব্য দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে হয়তো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এ নির্বাচন যাতে না হয় সেজন্য নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য দুটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। একটি হচ্ছে, এখন বিএনপির সুসময় চলছে। এই সুসময়ে অনেক ঘুঘু কাছে ভিড়বে। এই সুসময়ের ঘুঘুদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। আরেকটি হচ্ছে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থেকে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার সরকার মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। তারা দেশের স্বার্থ চিন্তা না করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করেছেন। তারা যখন দেশ লুটপাট করছিলেন, রাষ্ট্র মেরামতে তখন বিএনপি ৩১ দফা ঘোষণা করে। যারা এখন সংস্কার সংস্কার বলে দাবি তুলছেন, বিএনপি আড়াই বছর আগে এই সংস্কারের দাবি তুলেছিল। সময় এসেছে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচনের। তারেক রহমান বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ চাইলে বিএনপি হয়তো ক্ষমতায় যাবে। তবে ক্ষমতায় গেলেও বিএনপিকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। দেশে বহু বেকার রয়েছে- যাদের একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ অনেক খাতে বর্তমানে ভঙ্গুর অবস্থা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বিএনপি পরিকল্পনা করছে। বিএনপি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, দেশের মানুষ আজ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বিশ্বাস করে, একমাত্র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, একমাত্র আপনাদের প্রিয় দল বিএনপির পক্ষেই সম্ভব ধীরে ধীরে এই দেশকে আবার গড়ে তোলা। এ জন্য মানুষ বিএনপির কর্মীদের কাছ থেকে তাঁদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চায়। দেশে কী হচ্ছে তা জানতে চায়। এ জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের এমনভাবে চলতে হবে যাতে জনগণের আস্থা অর্জন করা যায়। জনগণের আস্থা অর্জন করে আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে হবে।