ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী-কুমিল্লার বিশাল অংশজুড়ে নজিরবিহীন যানজটে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে ঠেকেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম অংশে শনিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত যানজটের কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে না পেরে অনেকে উল্টা পথে ফিরেছেন।
কুমিল্লায় প্রায় ২০ কিলোমিটার, ফেনীতে প্রায় ২৫ কিলোটার এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড-মিরসরাই এলাকায় ২০ কিলোমিটার রাস্তায় ঠাঁই ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে যাত্রীবাহী বাস থেকে সব ধরনের যানবাহনকে। দীর্ঘ এই যানজটকে স্মরণকালের ভয়াবহ জট বলে মনে করছেন পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট মহল। আজ রবিবার সকালেও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড-মীরসরাই, ফেনীর মহীপাল-ফতেহপুর এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় তীব্র যানজট ছিল। বিশেষ করে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত যানজটের কারণে সাধারণ যাত্রী অন্যান্যদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে সাধারণ যাত্রী থেকে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সবাই সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পরিবহন সংশ্লিষ্টারা জানান, মূলত গত বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যান চলাচলে তীব্র বিঘ্ন ঘটে। ফেনীর ফতেহপুর রেল লাইনের ওপর ওভারব্রীজ নির্মাণকে কেন্দ্র করে গত প্রায় দেড় বছর ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এই মহাসড়কটি ৪ লেইনে উত্তোরণের ফলে যানজট অনেকটা কমে আসলেও ফতেহপুরের ওভার ব্রীজের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় যানজটের মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই জট তীব্র রূপ নেয় গত শুক্র ও শনিবার।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি ইফতেখার হাসান জানান, বৃহস্পতিবার থেকে যানজটের শুরু। মূল সমস্যা ফেনীতে হলেও এই জট চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লা পর্যন্ত লেগে থাকে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দেয়।
এদিকে শনিবার ভোরে শুরু হওয়া তীব্র যানজটের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড ও মীরসরাই এলাকায় আটকে পড়ে অনেকে মূল গন্তব্যে না গিয়ে উল্টো বাড়ি ফিরে যান। ঢাকার বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের আইন কর্মকর্তা চট্টগ্রামের আবু জাসেদ বিটু শনিবার সকাল ৯টার বাস ধরেন ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে। বিকাল ৩ টায় ফোন করে জানান, ‘আমরা আটকে আছি মিরসরাই এলাকায়। অলংকার মোড় থেকে মিরসরাই আসতে লেগেছে ৬ ঘণ্টা। কখন ঢাকায় পৌঁছবো জানিনা, তাই চট্টগ্রামের বাসায় ফিরে যাওয়াটাই ভাল হবে মনে করছি।’
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা আবদুর রহিম ব্যবসায়ীক কারণে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু যানজটে পড়ে মিরসরাই থেকে তাকে ফিরে আসতে হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ীক মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার কথা থাকায় আমাকে আজ (গতকাল) ফ্লাইটেই আসতে হয়েছে। মহাসড়কে এ রকম যানজট আমি খুব কম দেখেছি।’
স্থানীয়রা জানান, মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে শিশু ও বয়স্কদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকায় অনেকে গাড়িতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর নারী যাত্রীরা পড়েন শৌচাগার সংকটে।
এদিকে রবিবারও সকালে এই মহাসড়কে যানজট ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জট কিছুটা কমে আসে। এতে বড় ধরনের কোন সমস্যায় পড়তে না হলেও সাধারণ যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে অতিরিক্ত সময় লেগেছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার