নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবিতে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন পরবর্তী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের বরিশাল জেলার সভাপতি মো. আলী আজগর বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মাত্র ১০০০ শয্যার, কিন্তু আছে মাত্র ৫০০ শয্যার জনবল ও অবকাঠামো। এখানে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন ৩ হাজারেরও বেশি। আমাদের দায়িত্ব ৫০০ রোগীর সেবা দেওয়া। কিন্তু আমরা ৩ হাজার রোগীর সেবা দেই। সে কারণে আমরা যেমন সমস্যায় আছি তেমনি রোগীরাও সমস্যায় পড়ছে। কিন্তু সেবা দিতে গিয়ে আমাদের ওপর প্রতিনিয়ত হামলা হয়, হুমকি দেওয়া হয়। এই অবস্থায় আমরা চাই শয্যার বাইরে কোনো রোগী ভর্তি না হোক। হাসপাতালে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা হলে আমরা আগামী শনিবার থেকে কর্মবিরতিতে যাব।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্রতিনিধি নাজমুল হুদা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন যে কারণে হচ্ছে, স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার আমরাও চাই। তবে সেটি অবশ্যই যৌক্তিক পথে যৌক্তিকভাবে হোক। তবে আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট ভোগান্তি আমরা সমর্থন করতে পারছি না। এ সময় তিনি গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার চিত্র তুলে ধরে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলোর বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না পেলে এবং চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা হয়রানির শিকার হলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে যাবেন বলে জানান তিনি।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবিগুলোর সাথে একমত প্রকাশ করে মিড লেভেল ডাক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, হাসপাতাল কখনো আন্দোলনের জায়গা হতে পারে না। আমরা মনে করি, এখন যারা আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ করছে, তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে। তারা আমাদের চিকিৎসকের ওপর হামলা ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের সময় চিকিৎসককে নানা ভাবে হয়রানির চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় আমাদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, নয়তো আমরা কর্মবিরতিতে যাব।
দাবির সাথে একমত প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের সকল নার্স, টেকনোলজিস্টসহ ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। চিকিৎসকদের সাথে তারাও কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন শেষে মিড লেভেল ডাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টার্ন চিকিৎসক, বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন বরিশাল জেলা শাখা ও ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীরা হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীরের নিকট আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়ে পৃথক স্মারকলিপি দেন।
এ বিষয়ে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, হাসপাতালে কোনো ধরনের আন্দোলন কারো জন্য কাম্য নয়। তাই আমি এ বিষয়ে চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলেছি। তারা তাদের ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।
ছাত্রদের উদ্দেশে পরিচালক বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ প্রতিনিধি দল বরিশালের সকল শ্রেণীর মানুষের সাথে মতবিনিময় করছেন এবং আন্দোলনকারীদের সকল দাবি মেনে নিয়েছেন। এরপরও হাসপাতাল এলাকায় তাদের কোনো ধরনের আন্দোলন রোগীদের জন্য ভালো হবে না।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল