রাজধানী ঢাকায় আশঙ্কাজনকহারে ডেঙ্গু রোগ বাড়ার পর এবার চট্টগ্রামেও এর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। রবিবার পর্যন্ত সরকারি হিসাবে চট্টগ্রামে ৬১ জন ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রবিবারই নতুন করে আক্রান্ত হয় সাতজন। আক্রান্ত রোগীরা নগরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছে বলে জানা যায়।
তবে অভিযোগ ওঠেছে, চট্টগ্রামে নেই ডেঙ্গু টেস্ট করার ব্যবস্থা, কোথাও আছে কোথাও নেই’ এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে বিলম্বে শুরু হওয়া ক্র্যাশ প্রোগ্রাম। লিফলেট বিতরণ ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এমন অবস্থায় নগরবাসী ডেঙ্গু নিয়ে চরম আতঙ্কে আছেন বলে জানা যায়।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জুলাই মাসের শুরু থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল আটজন। গত বৃহস্পতি থেকে শনিবার পর্যন্ত তিনদিনে নতুন আক্রান্ত হয় ১৭ জন। বর্তমানে চট্টগ্রামে সরকারি হিসাবে মোট ৬১ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। তবে চট্টগ্রাম মহানগরের বাইরেও প্রতিদিন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে অনেক ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিলেও তার কোনো তথ্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে নেই।
সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘চট্টগ্রামে বর্তমানে মোট ৬১ জন ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। তবে এসব রোগীর জন্য সরকারিভাবে কীট সরবরাহ করা হবে। নগরে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ সেবা দেওয়া হবে। উপজেলায় একটি টিমের মতামত অনুসারে টেস্ট করে ওষুধ দেওয়া হবে। নগরে জেনারেল হাসপাতাল এবং চমেক হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদান করা হবে।’
জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ১৩ নং মেডিসিন ওয়ার্ডে পুরুষ ও মহিলার জন্য ২০টি করে ৪০ শয্যার একটি সেল চালু করা হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ চিকিৎসা দিতে এ সেল চালু করা হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সেবায় থাকবে চিকিৎসকদের বিশেষ টিম, টিমের সদস্যদের থাকবে বিশেষ পোশাক। গতকাল রবিবারও তিনজন নতুন রোগী ভর্তি হয়।
চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘বিশেষ সেল চালু করে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রবিবারও তিনজন রোগী ভর্তি করা হয়।’
এদিকে, অভিযোগ আছে চসিক ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালুর কথা বললেও মশক নিধন কার্যক্রম কোথাও আছে কোথাও নেই এমন অবস্থা। কর্মীদের এক ওয়ার্ডে দেখা গেলেও অন্য ওয়ার্ডে দেখা মিলছে না। ওয়ার্ডের মশক নিধন কার্যক্রমের চিত্রে হতাশ নগরবাসী। দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডের ঘাটফরহাদবেগ এলাকার বাসিন্দা শাহেদুল আলম বলেন, ‘শুনছি, সিটি কর্পোরেশন মশক নিধন কর্মসূচি শুরু করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে দেখা যায়নি।’
চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, ‘নগরবাসীকে ডেঙ্গু নিয়ে সতর্ক ও সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম চলছে। তাছাড়া ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাইকিং, সংবাদপত্রে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরে এডিশ মশা ঠেকাতে ক্রাশ প্রোগ্রাম চলছে। এ প্রোগ্রামের আওতায় প্রতিটি ওয়ার্ডের ড্রেনগুলোতে ২৫ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড, ১০ হাজার লিটার লার্ভিসাইড ছিটানো হচ্ছে। ১৬১ জন কর্মী এ কাজে নিয়োজিত আছে।’
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার