চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে কোন ধরণের প্রার্থী নেই জাতীয় পার্টির (এরশাদ)। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি জাতীয় পার্টিই হচ্ছে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল। দলীয় প্রার্থী দেয়া, না দেয়ার বিষয়ে রয়েছে প্রার্থীরাসহ নেতাদের নানা ধরণের মতামত-অভিযোগও।
মেয়রসহ বিভিন্ন পদে প্রার্থী দেয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনাগ্রহ, দায়সারাভাব, নেতৃত্ব শূন্যতা, নেতাদের কৌশলী আচরণ, নিরপেক্ষ নির্বাচন, অগোছালো নেতা-কর্মীসহ নানা প্রশ্ন উঠেছে। এসব প্রশ্নের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কেউই কথা বলছেন না দলের নেতারা। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্নেই কোন প্রার্থী দেয়া হয়নি বলে জানান কয়েকজন নেতা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির (জাপা) চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণ জেলার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। দলীয় কোন্দল, নতুন নেতৃত্ব তৈরি, কমিটি না থাকাসহ নানা অভিযোগ রয়েছেন দলের দায়িত্বশীল শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে।
কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে সমন্বয় না থাকা, চট্টগ্রামের নেতাদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কোন্দল, কমিটি না থাকা, পক্ষে-বিপক্ষে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা, নিযার্তনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড লেগেই আছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে (চসিক) জাতীয় পার্টি থেকে মেয়র পদে সোলায়মান আলম শেঠকে দলের পক্ষে মনোনয়ন নেয়ার সম্মতি দেয়া হলেও তিনি সর্বশেষ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
তাছাড়া যোগ্য নেতা না থাকা, কেন্দ্রীয় বা চট্টগ্রামের নেতাদের কৌশলী আচরণ, নির্বাচন প্রশ্নে দায়সারা নির্দেশনা, নির্বাচনী খরচসহ নানা প্রশ্নে কাউন্সিলর পদে কেউই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। তবে ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে শুধুমাত্র দুটি ওয়ার্ড ৩৬ নং ওয়ার্ডে সাকির আহমেদ ও বন্দরের আবদুর রউফ নামে দুজন জাপা নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। আর্থিক সংকটের কারণে তাও কোন ধরণের প্রচারণাও নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার একাধিক নেতা বলেন, চসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী করতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে যোগ্য কাউন্সিলর প্রার্থী নেই। নতুন নেতৃত্ব তৈরি, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অসন্তোষ, নেতাদের কেন্দ্রমুখী আচরণ, কর্মসূচী বিহীন সংগঠনসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে তৃনমূলে।
সবমিলে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের পুরুষ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে দলের যোগ্য প্রার্থী নিয়ে সংকটে পড়েছেন। তবে দল থেকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে নগর জাপার সভাপতি ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠকে মনোনয়ন দিলেও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না জানিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সোলামান আলম শেঠ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগের দিনই রাতের আদারে ভোট হয়ে যাবে। যত বারই নির্বাচন করেছি, নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে। তাই, নিজের টাকা নষ্ট না করেই আগে থেকেই নির্বাচন থেকে সরে গেলাম।
তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন নির্বাচন করার জন্য। মেয়র ছাড়াও কাউন্সিলর পদেও তেমন কেউই নির্বাচন করছেন না। শুধু শুধু কেন আমার নেতারা বা কাউন্সিলর পদে যিনি নির্বাচন করছেন, তিনি কেন টাকা নষ্ট করবেন। যেহেতু নির্বাচিত হবেন না, সেহেতু ভোট করে লাভ কি। তবে দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন না করতে কোন ধরণের বাধা ছিল না বলে জানান তিনি।
চসিক নির্বাচনের প্রার্থী হওয়া প্রশ্নে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়সারাভাবে আচরণ ছিল দাবি করে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. এয়াকুব হোসেন বলেন, প্রথম দিকে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কিছুটা নমনীয় ভাব দেখা গেলেও নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছিল, ততই দায়সারাভাবে শুরু হলো। এতে করে আমাদের কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নেতাদের আচরণে প্রার্থী হতে আগ্রহীভাবটাও কমে গেছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে নেতা-কর্মী থাকা সত্ত্বেও দলের প্রার্থী দেয়া যায়নি। প্রতিটি ওয়ার্ডে দলের প্রার্থীরা কাউন্সিলর নির্বাচিত না হলেও অন্তত তৃনমূলের নেতা-কর্মীরা হলেও সু-সংগঠিত হতো।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর