চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে তিন তরুণ চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এক সময় একজনের মাস্ক ছিড়ে যায়। তাৎক্ষণিক তিনি ব্যবহৃত মাস্ক নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে না ফেলে রাস্তায় ফেলে দিলেন। এ সময় জরুরি বিভাগের সামনের সড়ক ও আশপাশে ব্যবহৃত অনেক মাস্ক পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এভাবে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ব্যবহৃত মাস্ক ও গ্লাভস। ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এসব করোনা বর্জ্য। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। দূষণ করছে নদ-নদী ও সাগরের পানি। হুমকির মুখে পড়বে জলজপ্রাণি। শঙ্কা আছে স্বাস্থ্যহানির।
জানা যায়, অতীতে প্লাস্টিক ও পলিথিনসহ নানা কঠিন বর্জ্য পরিবেশ দূষণ করে আসছে। সঙ্গে ছিল মেডিকেল বর্জ্য। কিন্তু এখন যোগ হয়েছে করোনাবর্জ্য। বর্তমানে অতিব্যবহৃত মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, পিপিই, হেডকাভার, গগলস, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস ও ফেসশিল্ড কঠিন বর্জ্য হিসাবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
পরিবেশ গবেষকরা বলছেন, কার্যত করোনাবর্জ্য ‘সংক্রামক বর্জ্য’। তাই করোনাবর্জ্য সংগ্রহকারীরা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার আওতায় না থাকেন তাহলে তারাও সংক্রমণের ঝুকিতে থাকেন। তাছাড়া করোনাবর্জ্য বিভিন্ন খাল হলে নদীতে পড়ছে। ফলে নদনদী ও সাগরের পানি মত্রাতিরিক্ত দূষিত হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘করোনাবর্জ্যরে কারণে ঝুঁকি বাড়বে। এসব বর্জ্যরে কারণে জীবাণুর সংক্রমণের শঙ্কাই বেশি। তাই এগুলো যত্রতত্র না ফেলে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ধ্বংস করা উচিত। না হলে স্বাস্থ্যঝুকির শঙ্কা থাকে।’
ট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্য ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রভাষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাবর্জ্যকে কঠিন বর্জ্য হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে। এ বর্জ্যরে কারণে মাটি আর পানির বিশেষভাবে ক্ষতি হচ্ছে বেশি। করোনাবর্জ্য পানিতে ফেলার কারণে জলজপ্রাণির ক্ষতি এবং মাটিতে ফেলা হলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়। একইভাবে আশপাশে বন থাকলে তারও ক্ষতি হয়। তাছাড়া যেখানে সেখানে ফেলার কারণে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও বাড়ছে। এগুলো সাধারণ রোগীর মধ্যেও ঝুঁকি বাড়ায়।’
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রামে প্রতিদিন দুই টন মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এগুলো হালিশহর আনন্দবাজার এলাকার ময়লার ডিপোতে ফেলা হয়। তবে চট্টগ্রামে কোনো ইনসিনারেটর মেশিন নেই। ফলে এসব বর্জ্য জীবাণুমুক্ত না করে ময়লার ডিপোতে ফেলা হয়।’
চট্টগ্রামে করোনা রোগীর চিকিৎসা চলছে চমেক হাসপাতালে ৩০০ শয্যা এবং জেনারেল হাসপাতালের ১৫০ শয্যায়। এ দুই সেবা কেন্দ্র সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান দুটি আশপাশের আঙ্গিনা জুড়ে পড়ে থাকে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস। কয়েকদিন পড়ে থাকার পর পরিচ্ছন্নকর্মীরা সেগুলো অপসারণ করে থাকে। হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে ডাস্টবিন থাকলেও সেখানে ফেলা হয় না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী পিপিই একবার ব্যবহার করার পর তা বিপজ্জনক বর্জ্য হিসেবে গণ্য হয়। পিপিই ছাড়াও ফেসিয়াল টিস্যু, গজ, ব্যান্ডেজ, মুখোশ, রোগীদের ব্যবহৃত অক্সিজেন মাস্ক, ন্যাসোফেরিঞ্জিয়াল সোয়াবের টেস্ট টিউব, স্যালাইন ব্যাগ, ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ, সূচ বিপজ্জনক বর্জ্য। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এসব উপকরণ বিশেষভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু ব্যবহারের পর ধ্বংস না করায় এগুলো নতুনভাবে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার