চট্টগ্রামে টানা বর্ষণে নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এই জলাবদ্ধতার কারণে নিচু এলাকার বসবাসরত সাধারণ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। শনিবার সকাল থেকেই নগরীর নিচু এলাকার মধ্যে মুরাদপুর, শুলকবহর, জামেয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা এলাকা, চান্দঁগাও সমশের পাড়া এলাকা, বহদ্দারহাট, ষোলশহর ২ নম্বর গেইট, কাতালগঞ্জ, বাদুরতলা, চকবাজার, আগ্রাবাদ, হালিশহর এলাকায় রাস্তায় পানি উঠেছে।
নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচেও রাতে পানি জমে ছিল। পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় রিকশায় অথবা পায়ে হেঁটে হাঁটু পানিতে কষ্ট করে চাকরিজীবীরা যাত্রা করছেন কর্মস্থলে। দুই দিনের টানা বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহন কমে যাওয়ায় অফিসমুখী মানুষ ভোগান্তির পাশাপাশি নিচু এলাকার মানুষ পানিবন্দির কারণে অসহায় ও বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষসহ শত শত পরিবার।
অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে পাহাড় ধসে পৃথক ঘটনায় দুই বোনসহ নিহত হয়েছেন চারজন। নগরীর আকবরশাহ থানার ১ নম্বর ঝিল বরিশালঘোনা ও ফয়’স লেক লেকভিউ আবাসিক এলাকায় পৃথক পাহাড় ধসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বরিশালঘোনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একটি পরিবারের দুই বোন রয়েছেন। তারা হলেন- মাইনুর আক্তার (২০) ও শাহীনুর আক্তার (২৪)। লেকভিউ আবাসিক এলাকায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন লিটন (২৩) ও ইমন (১৪)। এই ঘটনায় আরও দুজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন নিহত মাইনুর ও শাহীনুরের বাবা ফজলুল হক (৭০) ও মা রানু বেগম (৬০)।
ভারি বর্ষণের ফলে নগরীর আকবরশাহ এলাকাসহ পৃথক দুটি পাহাড় ধসের ঘটনায় চারজনের মৃত্যু ঘটনার আগে এবং পরেও পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজন সরাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংও করা হচ্ছে। এই পাহাড় ধসের ঘটনাস্থলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের বিশেষ টীম পরিদর্শন করেছেন এবং বিস্তারিত খবরাখবর নিয়মিত নিচ্ছেন বলেও জানান দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন লিডার উচিন মারমা বলেন, গতকাল শুক্রবার রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টির সময় আকবরশাহ থানাধীন ১ নম্বর ঝিল এলাকায় পাহাড় ধসে একটি পরিবারের সদস্যরা চাপা পড়েন। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সদস্যরা চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চলে।
নিহত শাহীনুরের ফুফাতো বোন রেশমা আক্তার বলেন, দুই বোন ও তাদের মা-বাবা একসঙ্গে ১ নম্বর ঝিলের বাসায় থাকতেন। পাহাড় ধসে তাদের দুই বোনের এক বছর ও ছয় মাস বয়সী দুটি মেয়ে বেঁচে যায়। তারা মায়ের বুকে ছিল বলে তিনি জানান।
ভোগান্তি ও জলাবদ্ধতার বিষয়ে নুরুল ইসলাম নামের একজন বহদ্দারহাট এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, স্ত্রীকে নিয়ে জরুরি হাসপাতাল যেতে হচ্ছে, গাড়ি পাচ্ছি না। অনেকক্ষণ ধরেই অপেক্ষায় আছি। এরই মধ্যেই পানিও কমছে না। দুয়েকটি রিক্সা পেয়েছিলাম, ভাড়াও দ্বিগুণ। তবে পানি না কমলেও হাসপাতালে যে কোনভাবেই যেতে হবে বলে জানান তিনি।
সহকারী আবহাওয়াবিদ শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় প্রভাবের কারণে চট্টগ্রামের কোথাও কোথাও বজ্রপাতসহ ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। ২০ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মাঝারী থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। নদীবন্দরগুলোর জন্য ২ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। তবে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের হিসেবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অপরদিকে আমবাগান আবহাওয়া অফিসের হিসেবে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২০৪ দশমিক ৫ মিলিমিটার।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় নগরীতে যানবাহন চলাচলও কম। দুপুরে মসজিদগামীরা ভোগান্তিতে পড়েন বৃষ্টির কারণে। বৃষ্টির কারণে শনিবার সকাল থেকেই আবারও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় নগরীর বিভিন্ন স্থানে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলায় পানি ঢুকে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সেখানকার চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগী ও স্বজনরা। তাছাড়া নগরীর গোয়াছি বাগানসহ দুয়েকটি স্থানে গাছ ভেঙে পড়ায় দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয় নগরীর কয়েকটি স্থানে।
চসিকের ৭ নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো মোবারক আলী বলেন, টানাবর্ষণে ঝুঁকি এড়াতে আমার ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরতদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে কাজ করা হচ্ছে। আমার এলাকার আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ার টীম পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের নিরাপদে আনা জন্য কাজ কাজ করছেন। তাছাড়া জলাবদ্ধতার বিষয়েও চসিকের সমন্বয়ে কাজ করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর