নতুন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বস্ত্র ও পোশাক খাতের দাবিসমূহ বিবেচনায় না নিয়ে সরকার উল্টো শিল্পের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। এতে রফতানির উৎসে করহার, কাঁচামাল আমদানি শুল্ককর বাড়ানো হয়েছে। এক কথায় প্রস্তাবিত বাজেট এই খাতের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হবে। হয়রানিও বাড়বে। পোশাক খাতের প্রত্যাশিত দিক-নির্দেশনা নেই। এমনকি এই খাতের দেয়া বাজেট প্রস্তাবের ১টিও যথাযথভাবে বিবেচনা নেয়নি সরকার।
আজ রাজধানীর কাওরান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে বস্ত্র ও পোশাক শিল্প খাতের ৫টি বাণিজ্য সংগঠন যৌথভাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ সব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমই, বিজিএপিএমইএ ও বিটিটিএলএমইএ।
সংগঠনগুলোর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান এমপি, এফবিসিসিআই প্রথম সহসভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিকেএমইএ প্রথম সহসভাপতি এস. এম. আসলাম সানী, বিটিটিএলএমইএ চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ ও বিটিএমএ সহসভাপতি ফজলুল হক।
এতে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ জেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান, সহসভাপতি এস.এম. মান্নান কচি, সহসভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির, সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু, বিজিএপিএমইএ দ্বিতীয় সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মনি, বিইওজিডব্লিওআইওএ সভাপতি হেলাল উদ্দিন আহমেদ, বিজিএপিএমইএ উপদেষ্টা রাফেজ আলম চৌধুরী প্রমুখ।
এ কে এম সেলিম ওসমান এমপি বলেন, কর বড় কথা নয়। আমারা যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি, সেটা বড় কথা। এখাতে কতো লাখ মানুষের কর্মসংস্থা হয়েছে, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে সরকারকেই। অবান্তর কিছু যেন বাজেটে না হয়, সে দিকে দৃষ্টি চাই।
এফবিসিসিআই প্রথম সহসভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, সরকারকে দেখতে হবে বিগত দিনে বিনিয়োগ বেড়েছে কিনা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এ কারণে ট্যাক্সের জন্য শিল্পে অতিরিক্ত চাপ দিলে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবে। অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না। তিনি আরো বলেন, এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা হয়। কিন্তু প্রস্তাব প্রতিফলনের জায়গায় আশাহত হই। এটিকে বেগবান করতে হবে।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বস্ত্র ও পোশাক খাতের সমৃদ্ধির জন্য আশানুরূপ দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়নি। বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী শিল্পের উপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে ও ব্যবসা প্রক্রিয়া জটিল করে শিল্পের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা ঠিক হবে না। বাজেটে পোশাক খাতের দেয়া ১০টি প্রস্তাবের ১টিও যথাযথভাবে গৃহীত হয়নি। উৎসে কর বৃদ্ধিকে পোশাক শিল্পের বিকাশে বাধা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রফতানি মূল্যের ওপর উৎসে করহার দশমিক ৬০ থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করবে। এর যৌক্তিকতা নেই। পোশাক খাতের স্বার্থে প্রতিবছর উৎসে কর না বাড়িয়ে মুনাফার ওপর করারোপ অথবা কাটিং-মেকিংয়ের ওপর করারোপের প্রস্তাব দেন তিনি।
তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণ করায় প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টরের ইয়ার্ন ও ফেব্রিক ম্যানুফেকচারিং মিলগুলো পণ্য রফতানিতে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর যাবৎ সামগ্রিক টেক্সটাইল খাতে মন্দাভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে এখাতে বিনিয়োগ বা সম্প্রসারণ আশানুরূপ নয়। এক কথায় বন্ধ রয়েছে। যে মিলগুলো পাইপলাইনে স্থাপন পর্যায়ে রয়েছে সেগুলোতে আগামীতে স্থাপিত হবে কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। এ সময় প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সরকারকে ঠিক করতে হবে তারা বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান চায় নাকি প্রত্যক্ষ কর। আমাদের মতে প্রত্যক্ষ করের ওপর বেশি নজর না দিয়ে পরোক্ষ করের মাধ্যমে শিল্পবে সহায়তা করাই যৌক্তিক হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে রফতানিকারকদের হয়রানি বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘোষিত বাজেটে ৮২ (সি) ধারা পরিবর্তন করে ন্যূনতম করের বিধান প্রবর্তণ করা হয়েছে। যা পোশাক খাত সংশ্লিষ্টদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে হয়রানি ও জটিলতা বৃদ্ধি করবে। এ জন্য আয়কর আনার সংশোধনী আনার দাবি জানিয়েছেন তারা। শিল্পে বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা প্রণয়নের দাবি করে তিনি বলেন, শিল্প ও বিনিয়োগ নীতি বা সিদ্ধান্তগুলো বছর বছর পরিবর্তন না করে সেগুলো কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ বছর কার্যকর রাখা জরুরি। যাতে একজন উদ্যোক্তা স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
বিকেএমইএ প্রথম সহসভাপতি এস. এম. আসলাম সানী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বর্জ্য শোধনাগারের (ইটিপি) কেমিক্যালের আমদানি শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া রং, কেমিক্যালের ওপর শুল্ক ৩ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে নিটখাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
বিটিএমএ সহসভাপতি ফজলুল হক বলেন, গত সেপ্টেম্বরে গ্যাসের দাম শতভাগ বাড়ানো হয়েছে। এখন রফতানির উৎসে কর দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ চাপিয়ে দেয়া হলো। তাহলে সরকার কি দেশে শিল্প চায় না। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সুতা আসছে। দেশের মিলগুলোর সুতায় গোডাউন ভর্তি হয়ে রয়েছে। তাই এবারের বাজেট শিল্পবান্ধব বলা চলবে না।
বিডি প্রতিদিন/১৮ জুন ২০১৬/হিমেল-১৭