সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের 'নির্যাতন কক্ষ' হিসেবে পরিচিতি রুমটিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন সাভারের আওয়ামী লীগ নেতারা।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমানের কাছে একাধিকবার কলেজের শিক্ষক ও নির্যাতনের শিকার বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে বার বার অভিযোগ করার পর অবশেষে বন্ধ করে দেওয়া হলো সেই কক্ষটি।
কলেজটিতে ছাত্রলীগের অবৈধ দখলে থাকা কক্ষটিতে তালা ঝুলিয়ে দেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর মানিক মোল্ল্যা। এসময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রায় অর্ধশত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
কলেজে ছাত্র সংসদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষটি দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধভাবে দখল করে ব্যবহার করে আসছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ওই কক্ষের ভেতরে শিক্ষার্থীদের মারধরসহ নানা অনৈতিক কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ রয়েছে কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এছাড়াও কলেজের শিক্ষককে মারধরের অভিযোগে মামলা রয়েছে তাজুলের বিরুদ্ধে।
এই প্রসঙ্গে আওয়ামীলীগ নেতা মানিক মোল্ল্যা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র সংসদের কক্ষ অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দখল করে রেখেছিল। এছাড়া তারা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওই কক্ষে নিয়ে আটকে রেখে টর্চার করে , এখানে বসে ইয়াবা সেবন করে ,মাদক বিক্রি করে ও সাধারন ছাত্রীদের ধরে নিয়ে ইভটিজিং করা হয় ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করে কলেজের ভেতরে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড চালানো হতো।
সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমানের কাছে একাধিকবার কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। তার অনুরোধে সকালে সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাশেদ খান মেনন, সহ-প্রচার সম্পাদক আব্দুল মজিদসহ পৌর আওয়ামী লীগের অর্ধশত নেতাকর্মী নিয়ে আমি ওই কক্ষটিতে তালা মেরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ।
প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রিন্সিপাল দিল আফরোজ শামীম হেনা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক তাজুল দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্র সংসদের কক্ষটি অবৈধভাবে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। কলেজের শিক্ষার্থীদের জোর করে মিছিলে নিয়ে যাওয়া হতো। মিছিলে যেতে না চাইলে ওই টর্চার সেলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর ও অমানুষিক নির্যাতন করা হতো। জোর করে ইয়াবা পাচার করা হয়। এছাড়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজের ভেতরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মেয়েদের ইভটিজিংও করে আসছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গত ২১ নভেম্বর অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন সাধারণ সম্পাদক তাজুল ছাত্রলীগের প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী নিয়ে এসে এক শিক্ষার্থীর হাতে নকলের কপি তুলে দেয়। এ কারণে তিনি বিষয়টি পৌর আওয়ামীলীগ নেতাদের জানান।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ ছাত্র সংসদের জন্য বরাদ্দকৃত ওই কক্ষটি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তাজুল ওই কক্ষের ভেতরে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম চালাতো। মিছিলে বা ছাত্রলীগের কোনও কর্মসূচিতে কোনও ছাত্র অংশ না নিলে তাদের ধরে নিয়ে এসে ওই কক্ষে মারধর করা হতো। বিভিন্ন সময় তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো। ওই কক্ষে কলেজের মেয়েদের ডেকে নিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করা হয়েছে। এ কারণে কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষরাও ছাত্রলীগের ব্যবহৃত অফিস কক্ষটি ‘টর্চার সেল’ হিসেবেই জানতো।
এছাড়াও কলেজের আতঙ্কের নাম ছিল ছাত্রলীগ নেতা তাজুল ইসলাম। গত বছর তার অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরোধিতা করায় তাজুলের নির্দেশে কলেজের অফিস সহকারী গাজী শামসুদ্দিনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে তার অনুসারীরা। এঘটনায় তাজুলকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করেন ওই ভুক্তভোগী শিক্ষক। এছাড়াও বিভিন্ন উপলক্ষকে সামনে রেখে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী।
তবে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি অমিত দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহম্মেদ তাজুল তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাদের দাবি, এসব অভিযোগের বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাভার কলেজে ছাত্রলীগ নেতাদের ‘টর্চার সেলের’ বিষয়টি কলেজে ভিতরে ইয়াবা সেবন করে এই সব অভিযোগ আমার কাছে কেউ করেনি। তবে ছাত্রলীগের নেতারা কেউ এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডিপ্রতিদিন/ ২৮ নভেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান