নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা নন্দলালপুরে ফেসবুকে প্রতারণার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে মাদরাসা শিক্ষার্থী আবু নাঈম (১৭)। ফেসবুকের ফেক আইডির মাধ্যমে নাঈমকে ডেকে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ সোমবার (২৭ নভেম্বর) রাতে সুমন নামে একজনকে ফতুল্লার নন্দলালপুর থেকে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে গ্রেফতারকৃত সুমন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আহম্মেদ হুমায়ন কবিরের আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে।
গ্রেফতারকৃত সুমন ওরফে ঝালকাঠির নলছিটির কুশংগাল এলাকার মনির হোসেনের ছেলে। তিনি ফতুল্লার নন্দলালপুর উত্তর মহল্লার শাহ আলমের বাড়ির ভাড়াটিয়া। নিহত আবু নাঈম মুন্সিগঞ্জের চরডুমিয়ার এলাকার ব্যবসায়ী মনসুর আহম্মেদের ছেলে। তারা ফতুল্লার পিলকুনি জোড়া মসজিদ এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। সে আলীগঞ্জ মাদরাসার ছাত্র ছিল।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (আইসিপি) গোলাম মোস্তফা জানান, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সুমন ওরফে রাফাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত সুমন আদালতে স্বীকারোক্তিতে জানায়, ফতুল্লার পিলকুনী এলাকার জনি (১৮), হৃদয়সহ (১৮) অজ্ঞাত আরো ২০ থেকে ২২ জন সহযোগী বেশ কিছুদিন ধরেই ফেসবুকে বিভিন্ন মেয়ের নামে ভুয়া আইডি খুলে লোকজনদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে এবং পরবর্তীতে মেয়ের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ব্লাকমেইল করে তাদের সর্বস্ব লুটে নেয়।
এ ছাড়াও তাদের জিম্মি করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও দাবি করে তারা। কিছুদিন পূর্বে জনি ‘সিনথিয়া জাহান তরা’ নামে ফেসবুকে ভুয়া একটি আইডি খোলে। ওই আইডির মাধ্যমে নাঈমকে ফেসবুকে বন্ধু বানায়। পরে নাঈমের সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে ভুয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। গত ১৬ নভেম্বর জনি, তুরাব, হৃদয়, সুমন, সিফাতসহ অন্যরা মিলে নাঈমকে ডেকে এনে আটকে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে। এরপর পরিকল্পনা মোতাবেক ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় নাঈমকে নন্দলালপুরস্থ কাকলী ডাইং এর গলির ভেতরে ডেকে আনে জনি, হৃদয়, তুরা, সুমন ও তাদের সহযোগী ২০-২২ জন। নাঈম ওই গলিতে আসামাত্র তাকে আটকে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করলে নাঈমের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তির একপর্যায়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে নাঈমের মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায় প্রতারক চক্রের সদস্যরা। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নাঈম। পরে রাত ১২টার দিকে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালসহ ও ফেসবুকে নিহতের ছবি দেখে স্বজনরা ফতুল্লা থানায় গিয়ে পরিচয় শনাক্ত করেন।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি কামালউদ্দিন জানান, গ্রেফতারকৃত সুমন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। আসামির দেয়া তথ্য মোতাবেক মামলার আলামত মোবাইল, চাকু উদ্ধারসহ অন্যান্য সহযোগী আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।
বিডি প্রতিদিন/২৮ নভেম্বর ২০১৭/হিমেল