কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী মনোরম পরিবেশ। ৫তলা প্যাভেলিয়ন, প্রেসবক্স, ড্রেসিং রুম, ভিআইপি গ্যালারী, ৩৫ হাজার দর্শক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন সাধারন গ্যালারী, ফ্লাড লাইট, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য বিশাল আউটার স্টেডিয়াম সহ রয়েছে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা। কিন্তু আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম হয়েও বরিশালের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত জেলা স্টেডিয়ামে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোন খেলা না হওয়াতে হতাশ বরিশাল অঞ্চলের ক্রীড়াপ্রেমীরা।
দেশের সব চেয়ে বড় স্টেডিয়াম এবং সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকার পরও বরিশালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলা না হওয়ার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকে দুষছেন জেলা দলের সাবেক ফুটবলার গাজী শফিউর রহমান দুলাল ও সাবেক ক্রিকেটার জহিরুল ইসলাম জাফরসহ অনেকে।
তবে বরিশাল স্টেডিয়াম নিয়ে এবার তৎপর হচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারী বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানের বিশাল জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অন্যান্য দাবীর সাথে বরিশাল স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজনের জোড়ালো দাবী জানানোর কথা বলেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি।
বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি প্রফেসর এম. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, নদীর তীরবর্তী মনোরম পরিবেশ সমৃদ্ধ এতবড় স্টেডিয়াম দেশে দ্বিতীয়টি নেই। তারপরও এখানে জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) এবং আন্তর্জাতিক কোন আসর না হওয়া দুঃখজনক। ক্রীড়াপ্রেমীদের দির্ঘ দিনের দাবি বরিশালে আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজনের।
সব শ্রেনী পেশার মানুষের পাশপাশি এবার স্থানীয় রাজনৈতিক মহল থেকে বরিশাল স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজনের জোড়ালো দাবি উঠেছে। নির্বাচনের বছর হওয়ায় এবার প্রধানমন্ত্রী জনদাবির প্রতি সন্মান দেখিয়ে বরিশাল স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজনের সুষ্পস্ট ঘোষনা দেবেন বলে প্রত্যশা করেন সাবেক যুগ্ম সচিব প্রফেসর এম. মোয়াজ্জেম হোসেন।
নগরীর বান্দ রোড লাগোয়া কীর্তনখোলা নদীর তীরে ২৯.২৫ একর জমির উপর বরিশাল জেলা স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। ২০০৬ সালে প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়ন করা হয় বরিশাল স্টেডিয়ামের। আধুনিক এই স্টেডিয়ামে রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের সকল সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু তারপরও বরিশালে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক খেলা থেকে বঞ্চিত এ অঞ্চলের মানুষ। এমনকি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগের (বিপিএল) বিগত আসরগুলোর একটি ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়নি বরিশালে। জাতীয় লীগে বরিশালের লোকাল ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা এবং বগুড়া স্টেডিয়াম।
ঘরের মাঠে এ অঞ্চলের প্রতিভাবান খেলোয়ারদের খেলা উপভোগ করতে না পাড়ায় ক্ষুব্ধ বরিশাল জেলা স্টেডিয়ামের ক্রিকেট কমিটির সাবেক সাধারন সম্পাদক প্রদীপ গাঙ্গুলী। এই পরিস্থিতির জন্য জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সমন্বয়হীনতা সহ স্থানীয় সংগঠকদের অদুরদর্শিতা ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন তারা।
যদিও বরিশাল স্টেডিয়ামে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথ বলেছেন বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক আলমগীর হোসেন খান আলো। দক্ষিনের কোটি মানুষের প্রত্যাশা পূরনে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী বরিশাল স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজনের ঘোষনা দেবেন বলে আশা করছেন ক্রীড়া সংগঠক আলো।
জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা অনুমোদিত ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, হ্যান্ডবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, লং টেনিস, কারাতে, উষু, সাইক্লিং, সাঁতার, বক্সিং সহ অন্তত ২০টি ইভেন্ট চালু থাকার কথা থাকলেও বরিশালে ক্রিকেট, ফুটবল সহ মাত্র কয়েকটি ইভেন্ট চালু রয়েছে নামমাত্র। অন্যান্য ইভেন্টগুলোর হদিস নেই এখানে।
এছাড়া প্রতি বছর ক্রিকেট ও ফুটবল লীগের মাধ্যমে তৃনমূল থেকে প্রতিভাবান খেলোয়র বাছাই করার কথা থাকলেও নেই নিয়ম শুধু কাগজে কলমে সিমাবদ্ধ বলে অভিযোগ ক্রীড়া সংগঠকদের।
বিডি-প্রতিদিন/ আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর