রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে বিহারিদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় দুইটি মামলা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে, আরেকটি নাশকতার। একইসঙ্গে ঘটনার সময় আটক ১২ জনের মধ্যে ১০ জনকে এই দুই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতে পুলিশ বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দুটি করে। এতে নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয়ের অনেককে আসামি করা হয়েছে।
তেজগাঁও ডিভিশনের ডিসি আনিসুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, পুলিশের ওপর হামলা, মারামারি, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মোহাম্মদপুর থানায় করা একটি মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় অনেকেই আছেন।গতকাল শনিবার ওই হামলার ঘটনায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১২ জন পুলিশও রয়েছেন।
জানা গেছে, গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে নিয়মিত ফ্রি বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিতে বিহারিরা রাস্তায় অবস্থান নেয়। এ সময় স্থানীয় কাউন্সিলর মিজান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বোঝাতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। অভিযোগ অনুযায়ী, জেনেভা ক্যাম্পে যেসব বিহারি বসবাস করে তাদের কাছে বিপুল অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। যার কারণে শুক্রবার রাতে সেখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করা হয়। এরপর থেকেই বিহারিরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আসছিল।
গতকাল জেনেভা ক্যাম্পের পাশের স্থানীয় কাউন্সিলর তাদের বুঝাতে গেলে একপর্যায়ে কথা কাটাকাটি হয়। পুলিশ এবং র্যাব সদস্যরাও বিহারিদের বুঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ বিহারিরা তাদের ওপর হামলা এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুরো এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিক্ষুব্ধরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে ওই এলাকাসহ আশপাশে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। পরে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ ছাড়াও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
বিক্ষুব্ধদের দাবি, বিদ্যুতের দাবিতে তারা শান্তিপূর্ণভাবে গজনবী রোডে অবস্থান নিলে পুলিশ ক্যাম্পবাসীদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে। এরপর তারাও উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ রেসিডেন্সিয়াল কলেজের সামনে থেকে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
উর্দুভাষী যুব-ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ জুয়েল জানান, বেশ কিছুদিন ধরে জেনেভা ক্যাম্পে নিয়মিত বিদ্যুৎ প্রদান করা হচ্ছে না। দিনের বেলা তো বিদ্যুৎ থাকেই না, রাতের বেলায়ও বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা জেএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছে না। তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা মানতে নারাজ। পুলিশের দাবি, বিহারিদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে তাদের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। অন্যদিকে বিহারিরা তাদের অর্ধশতাধিক লোক আহতের দাবি করেছে। জানা গেছে, জেনেভা ক্যাম্পে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের বিদ্যুৎ বিল এতদিন পরিশোধ করে আসছিল ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিল না দেওয়ার ঘোষণার পরই ওই এলাকায় বিদ্যুৎ অনিয়মিত হয়ে যায়। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান জানান, প্রতি মাসে এক কোটি ২০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয় জেনেভা ক্যাম্পে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিদ্যুৎ বিল না দেওয়ায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকা বকেয়া হয়েছে। ফলে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আনিসুর রহমান জানান, বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার বিষয়টি সুরাহা করার জন্য জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানের সঙ্গে কথা বলতে যায়। আলোচনা চলাকালে ভুল বোঝাবুঝি হয়। তারা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে আহত করে। পরে পুলিশ গিয়ে আহত অবস্থায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশের ওপরও হামলা চালানো হয়। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা