চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ এবং ক্যাসিনো সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এই ক্যাসিনোটিতে বাংলাদেশি মুদ্রায় নয়, খেলা হতো মার্কিন ডলারে!
গুলশানের বাড়িতে তার দুই ভাতিজা অবৈধ বার ও ক্যাসিনো চালাচ্ছিলেন। ছয়তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে, ছাদে মদ ও সিসার বার তৈরি করেছিলেন আজিজের মৃত ভাই রাজা মোহাম্মদ ভাইয়ের ছেলে ওমর মোহাম্মদ ভাই। একই ভবনের আরেকটি ফ্ল্যাটে বিপুল পরিমাণ মদের সঙ্গে ক্যাসিনো সামগ্রী রেখেছিলেন রাজার আরেক ছেলে আহাদ মোহাম্মদ ভাই।
গত রবিবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) অভিযানে গ্রেফতার দুজন-নবীন ও পারভেজ ছিলেন আহাদের কর্মচারী। অভিযান টের পেয়ে রান্নাঘরের পাশে ফায়ার এক্সিট দিয়ে পালিয়ে যান ওমর মোহাম্মদ। আর অভিযানের দুই দিন আগে বাড়ি থেকে চলে যান আহাদ মোহাম্মদ। তাদের বাড়ির অবৈধ বার ও ক্যাসিনো খেলার আড্ডায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ঘনিষ্ঠসহ অনেক প্রভাবশালীরা যাতায়াত করতেন।
সোমবার গুলশান থানায় ডিএনসির গুলশান সার্কেলের পরিদর্শক শামসুল কবির ও উপ-পরিদর্শক আতাউর রহমান বাদী হয়ে দুটি মামলা ও একটি জিডি করেন। একটি মামলায় ওমর মোহাম্মদ ভাইকে (৪০) আসামি করা হয়। অন্য মামলায় আসামি করা হয়েছে বাসার দুই তত্ত্বাবধায়ক নবীন মণ্ডল (৪৮) ও পারভেজকে (২৪)। এছাড়া ক্যাসিনো সামগ্রী জব্দ করায় জিডি করা হয়।
ওমর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, গুলশানের ৫৭ নম্বর সড়কের ১১/এ হোল্ডিংয়ের ছয়তলা বাড়ির তৃতীয় তলায় ওমর তার ডু-প্লেক্স ফ্ল্যাটে ও ছাদে মাদকদ্রব্য মজুদের জন্য বিশেষ কারুকার্য করে ঘর তৈরি করেন। সেখানে মদ ও সিসা বিক্রির এবং সেবনের আড্ডা হতো। ফ্ল্যাটে বিশেষভাবে নির্মিত কেবিনেট থেকে আট বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। ছাদের ঘর থেকে ২৪ ক্যান বিয়ার, তিন কেজি সিসা, ২০০ গ্রাম গাঁজা ও সিসা সেবনের তিনটি হুক্কা জব্দ করা হয়।
ডিএনসির একটি সূত্র জানায়, অভিযানের দুই দিন আগে আহাদ মোহাম্মদ বাড়ি থেকে চলে যান। তিনি বিদেশে চলে গেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে অভিযানের সময় বাড়িতেই ছিলেন ওমর মোহাম্মদ। তিনি তল্লাশি টের পেয়ে রান্নাঘরের পাশের একটি ফায়ার এক্সিট দিয়ে পালিয়ে যান। নবীন মণ্ডল ও পারভেজের তত্ত্বাবধানে থাকা ফ্ল্যাটটি আহাদ মোহাম্মদের। তিনিই বাড়িতে ক্যাসিনো খেলার ব্যবস্থা করেছেন বলে নবীন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
ডিএনসির ঢাকা মেট্রোর উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, মাদকদ্রব্যসহ দুজনকে পাওয়ায় এবং একজনের মালিকানার তথ্য পাওয়ায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। দুই আসামিকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে। তদন্তে অন্য কারো নাম এলে তখন তার নাম যুক্ত হবে।
অন্যদিকে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তার হিসাব জব্দ করতে ব্যাংকগুলোতে চিঠি দিয়েছে। আগামী ৩০ দিন আজিজ মোহাম্মদের ব্যাংক হিসাবগুলোতে কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না। বিএফআইইউ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত