ময়মনসিংহ নগরীর ব্রীজ মোড়ের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গত ২১ অক্টোবর উদ্ধার হওয়া লাল ব্যাগে পলিথিনে মোড়ানো খণ্ডিত লাশটি মো. বকুল (২৮) নামে এক যুবকের। তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলায়।
জানা যায়, গত ১৯ অক্টোবর রাতে গাজীপুরের জয়দেবপুরে বকুলকে হত্যা করা হয়। পরে ২১ অক্টোবর হাত-পা ও মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ময়মনসিংহে এবং কুড়িগ্রাম সদর ও রাজারহাটে ফেলে রাখা হয়।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন ফারুক মিয়া (২৫), তার ভাই হৃদয় মিয়া (২০), বোন সাবিনা আক্তার (১৮) এবং ফারুকের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার (২২)।
সাবিনা আক্তারকে উত্ত্যক্ত করার কারণেই বকুলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন তারা।
বুধবার বেলা ১১টায় ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্স দরবার হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন। তিনি জানান, মামলার তিনদিনের মাথায়ই গত ২৮ অক্টোবর গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থেকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই নারীসহ চারজনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের রহস্য ও লাশের পরিচয়।
পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন আরও জানান, নির্মম হত্যার শিকার বকুল ও হত্যাকারীদের বাড়ি নেত্রকোনার পুর্বধলার হোগলা গ্রামে। সাবিনাকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করতো বকুল। এনিয়ে উভয় পরিবারে ঝগড়া বিবাদ চলছিল। এমনকি সাবিনার বাড়িঘরে হামলাও করে বকুলের লোকজন। পরে বাধ্য হয়েই সাবিনা গ্রাম ছেড়ে গাজীপুরের জয়দেবপুরে ভাই ফারুকের বাসায় চলে যায়। গত ১৩ জুন একই গ্রামের আবু সিদ্দিকের সাথে সাবিনার বিয়ে হয়। বিয়ের পরও বকুলের কারণে অশান্তি নেমে আসে সাবিনার পরিবারে।
পুলিশ সুপার জানান, এরপরই মূলত বকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আসামিরা। পরিকল্পনা মতো সাবিনা প্রেমের অভিনয় করেন বকুলের সাথে। এরপর তাকে নিয়ে গাজীপুরে যান সাবিনা। পরে তার দুই ভাই গার্মেন্টসকর্মী ফারুক, হৃদয় ও ফারুকের স্ত্রী মিলে গার্মেন্টসে ব্যবহৃত ছুরি দিয়ে হত্যা করেন বকুলকে। এরপর শরীর কেটে ছয় টুকরা করা হয়। পরদিন সকালে ভাই ফারুক ট্রলি ব্যাগে করে খণ্ডিত দেহ ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রীজের কাছে এবং সাবিনা ও তার ভাবী মৌসুমী দেহের অন্য অংশগুলো কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ফেলে রাখেন।
উল্লেখ্য, গত ২০ অক্টোবর ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রীজ সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লাল একটি ট্রলি ব্যাগ পড়ে থাকে। প্রথমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাগটির ভেতর বোমা সন্দেহে রাতভর ঘিরে রাখে। পরদিন ঢাকা থেকে সকাল ৮টার দিকে পুলিশের বোমা বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যাগ খুললে বের হয় অজ্ঞাত যুবকের মাথা ও হাত-পা বিহীন খণ্ডিত লাশ। ওইদিনই দেহের বাকী অংশ কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্নস্থানে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ২৫ অক্টোবর কোতোয়ালী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামির নামে মামলা দায়ের করে।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম