বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা বিচারের জন্য ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি আগামী ৬ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস এ আদেশ দেন।
এর আগে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আবরার ফাহাদ হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য ঢাকার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদন করেন তার বাবা বরকত উল্লাহ। পরে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বুধবার আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার ২২ জনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এ ছাড়া পলাতক রয়েছেন তিন আসামি। গত ২১ জানুয়ারি এই হত্যা মামলায় বুয়েটের ২৫ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন আদালত। গত বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মামলা সূত্রে জানা গছে, গত বছরের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে পরস্পরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করে। ক্রিকেট স্টাম্প, মোটা দড়ি দিয়ে নির্যাতন করার একপর্যায়ে আবরার ফাহাদ বমি ও প্রস্রাব করে ফেলেন। আসামি মিজানের দেওয়া আবরারের বিরুদ্ধে শিবির করার ‘তথ্যের’ ভিত্তিতে তাকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
আবরার ফাহাদকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নেওয়ার পর আসামি ইফতি মোশাররফ অন্যদের বলেন, ‘তোরা এবার আবরারের কাছ থেকে তথ্য বের কর। বুয়েটে কে কে শিবির করে।’ তখন আসামি মোয়াজ আবু হোরায়রা ও অমর্ত্য ইসলাম আবরারের মুমূর্ষু অবস্থা দেখে আসামি মেহেদি হাসান ওরফে রবিনকে জানান, আবরারকে হাসপাতালে নিতে হবে। এই কথা শোনার পর মেহেদি হাসান ওরফে রবিন বলেন, ‘ও নাটক করছে। শিবির চেনস না। শিবির চেনা কষ্ট।’ রাত আড়াইটার সময় আসামি ইফতি মোশাররফ, মুজাহিদ, তাবাখখারুল ও তোহা মিলে আবরারকে তোশকে করে হলের দোতলার সিঁড়িতে রাখেন। এরপর আসামিরা বুয়েটের চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনেন। চিকিৎসক আবরারের দেহ পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- বহিষ্কৃত বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার ওরফে অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, কর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মুজাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ। আসামিদের মধ্যে প্রথম ২২ জন কারাগারে ও তিনজন পলাতক রয়েছেন। আর আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম