১০ এপ্রিল, ২০২১ ১৯:৩৮

বরিশালে স্কুলছাত্রী আত্মহননের ৯ দিন পর কথিত প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালে স্কুলছাত্রী আত্মহননের ৯ দিন পর কথিত প্রেমিকের বিরুদ্ধে মামলা

তামান্না আফরিন।

বরিশালে স্কুলছাত্রী তামান্না আফরিন (১৫) আত্মহননের ঘটনায় ৯ দিন পর মামলা হয়েছে। শনিবার ছাত্রীর বাবা রফিকুল ইসলাম টিপু বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা করেন।

মামলায় স্কুলছাত্রীর কথিত প্রেমিক প্রতিবেশী সাদমান গালিবকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. আসাদুল ইসলামকে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, প্রায় ৬ মাস আগে তামান্নাকে চাইনিজ খাবারের আড়ালে চেতনানাশক খাইয়ে নিজ বাসায় নিয়ে যায় তার কথিত প্রেমিক গালিব। খবর পেয়ে তার বাবা ও মা গালিবের বাসা থেকে প্রায় অচেতন অবস্থায় তামান্নাকে উদ্ধার করে। ওইদিন গালিব তামান্নার অশালীন ছবি এবং ভিডিও মোবাইল ফোনো ধারণ করে রাখে বলে অভিযোগ তাদের।

পরে ওই ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তামান্নার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করে গালিব। টাকা না পেয়ে ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। অশ্লীল ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার পর গালিব তার কথিত প্রেমিকা তামান্নার কাছ থেকে সটকে পড়ে। গত কিছুদিন ধরে তামান্নার সাথে একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় গালিব।

এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। সরলতা ও বিশ্বাসের সুযোগে প্রেমিকের প্রতারণার কারণে রাগে-ক্ষোভে এবং অভিমানে গত ২ এপ্রিল দুপুরে নানা বাড়িতে ফ্যানের সাথে ওড়না বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহনন করে তামান্না। তামান্নার মৃত্যুর পর তার পড়ার টেবিলে খাতার শেষ পৃষ্ঠায় তামান্নার হাতের লেখা একটি চিরকুট (সুইসাইড নোট) পায় তার পরিবার।

চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘আমি আজ সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর জন্য শুধু একজনই দায়ী। তার নাম হলো সাদমান গালিব। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু ও (গালিব) আমার সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চায় না। তাই আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না ভেবে সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমি সাদমানকে অনেক ভালোবাসি, ও বুঝল না। আশা করি আমার মরার পর ও (গালিব) আমার ভালোবাসাটা অনুভব করবে। আমি আর বেশি কিছু বলতে চাই না। বিদায় সাদমান।’

ওই চিরকুটসহ গত মঙ্গলবার সাদমান গালিবের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দেয় তার বাবা রফিকুল ইসলাম টিপু। শনিবার ওই অভিযোগ মামলা হিসেবে রুজু করে কোতয়ালী থানা পুলিশ। মামলার অভিযোগ তদন্ত করে আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তামান্নার মা জাকিয়া বেগম।

মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান জানান, আসামিকে দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

তামান্না নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দার এআরএস বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তারা বাবা এবং মা বেসরকারি চাকরি করেন। তাদের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ৩ বছর আগে এই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে ওই দুই কন্যা মায়ের হেফাজতে নগরীর আলেকান্দা কাজীপাড়ায় নানা বাড়িতে থাকত।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর