বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, সাংবাদিকতার মূলভিত্তি হচ্ছে সততা। একজন ভালো সাংবাদিক কখনও মিথ্যে বা পক্ষপাতদুষ্ট খবর প্রচার করেন না। সত্য তথ্য যাচাই করে, নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে খবর পরিবেশন করা তার মূল কাজ।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় সম্পদ বিশ্বাসযোগ্যতা। যে গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা যত বেশি, দর্শক- শ্রোতা এবং পাঠকের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা তত বেশি। তাই জনস্বার্থে, সংবাদমাধ্যমের স্বার্থে এমনকি নিজ স্বার্থেই সাংবাদিককে তাদের প্রাত্যহিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নৈতিকতার চর্চা করতে হয়। সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা হলো বস্তুনিষ্ঠতার জায়গা। বস্তুনিষ্ঠতায় ঘাটতি পড়লে সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা আসে। তাই বস্তুনিষ্ঠতা খুবই জরুরি।
আজ দুপুরে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সভায় তিনি এসব বলেন।
কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বাচ্চুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শামীম উল হাসান অপুর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়েদুর রহমান শাহীন, দফতর সম্পাদক আবু বকর, নুরুন্নবী বাবু, এম এ জিহাদ, আল মামুন সাগরমো: বকুল আলী, ইব্রাহীম খলিল, খালিদ হাসান সিপাই, আব্দুম মুনিব, মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু, মীর আল আরেফীন বাবু, হায়দার আলী, মুজিবুর শেখমাহফুজ উর রহমান,সিহাব উদ্দিন, তারেকুল ইসলাম তারেক প্রমুখ।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্র একটি দেশ ও জাতিকে যেমন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, আবার জাতির সর্বনাশও করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সংবাদ পরিবেশনই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিরপেক্ষ বস্তুনিষ্ঠ খবর সমাজে শান্তি আনে, আর মিথ্যা খবর কখনো সমাজকে বিষিয়ে তোলে, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তাই সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের সতর্ক হয়েই লিখতে হয়। তাই সাংবাদিকরা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি নীতিসচেতন। এটি তাদের হতেই হয়।
অসীম ত্যাগ ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকরা সত্য তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরেন। তাই সাংবাদিকরা জাতির বিবেক হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত।সাংবাদিকরা হলেন মানবতার অতন্দ্র প্রহরী। সাংবাদিকদের সমাজ ও রাষ্ট্রের 'ওয়াচডগ' বলা হয়। সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে, ন্যায় ভিত্তীক সমাজ তৈরিতে, অন্যায়, দুর্নীতি আর ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে জনগণকে জাগ্রত করতে, মানুষের সত্যিকারের কন্ঠস্বর হয়ে সাংবাদিকরা পারেন সমাজে আলোর প্রদীপ জ্বালাতে। এটিই আমাদের করতেই হবে। না হয় সাংবাদিকদের যে সম্মানসূচক উপাধি দেয়া হয়েছে এসব কলঙ্কিত হবে। স্যামুয়েল ল্যাংহোর্ন ক্লেমেন্স যার কলম নাম মার্ক টোয়েন হিসেবে জগদ্বিখ্যাত একজন আমেরিকান লেখক, উদ্যোক্তা, প্রকাশক এবং প্রভাষক ছিলেন। তিনি সংবাদপত্রকে দ্বিতীয় সূর্যের সাথে তুলনা করেছিলেন। তার মতে পৃথিবীতে প্রতিদিন দুটি করে সূর্য উঠে। প্রথমটি পৃথিবীর প্রভাত সূর্য যা প্রকৃতির দান। আর দ্বিতীয়টি সংবাদপত্রের সূর্য। পৃথিবী আলোকে উদ্ভাসিত হয় প্রভাত সূর্যের চিরন্তন আলোয়। আমাদের সকলের জীবন তথা সমাজ আলোকিত এবং সমৃদ্ধ হয় সংবাদপত্রের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের সূর্যের দ্বীপ্ত কিরনে। অন্যদিকে হেনরী ওয়ার্ড এর মতে "সংবাদপত্র মানুষের কাছে অগনিত স্বর্নের চেয়েও বড়ো সম্পদ।" আমাদের ভুল বা স্বার্থপরতার কারণে যেন গণমাধ্যম তার মর্যাদা না হারায়।
বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে সত্যের আরাধনা। লেখনীর মাধ্যমে সাংবাদিকরা সত্য উদ্ঘাটন, দুর্নীতি উন্মোচন ও জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরে। যার ফলে আমাদের দেশে সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। গত দুই দশকে ৬৮ জন সাংবাদিককে জীবন দিতে হয়েছে। আহত হয়েছেন শত শত সাংবাদিক। পত্রিকার পাতা খুললেই প্রতিদিন সাংবাদিক নির্যাতনের খবর দেখতে হয় আমাদের। তাই পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সাংবাদিকরা অনেক ধরনের হুমকি, হেনস্তা এবং শারীরিক আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এতে সাংবাদিকদের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী এবং কার্যকর আইন প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন