মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আত্মহত্যায় ঝুঁকছে শিশুরা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীর লাভলেইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী স্বপ্না আকতার। গত ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলে অকৃতকার্য হয় স্বপ্না। বাসায় ফিরেই মায়ের বকা থেকে রক্ষা পেতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে। শুধু স্বপ্না নয়, গত কয়েক বছরে এভাবে অনেক শিশু-কিশোর তুচ্ছ কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। শিশুদের এভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়াকে অশনি সংকেত হিসেবে দেখছে বিশেষজ্ঞরা। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু এবং সাইকোলজিস্ট নিয়োগের তাগিদ দিয়েছেন তারা। সমাজবিজ্ঞানী ড. গাজী সালাহ উদ্দিন বলেন, শিশু-কিশোরের ওপর পারিবারিক চাপ, তাদের মানসিক সমস্যা, পরীক্ষায় বেশি নাম্বার এবং পাস করার প্রতিযোগিতার কারণে মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে হলে স্কুল পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য প্রকল্প চালুর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, শিশু-কিশোরদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসিক বিকাশের জন্য সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরীক্ষা ও প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না পাওয়া, অভিভাবকদের বকাঝকা, বিভিন্ন টিভি সিরিয়ালে আত্মহত্যার দৃশ্য দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং পিতা-মাতার পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে শিশু-কিশোররা আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকছে। বিশেষজ্ঞরা আত্মহত্যার প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের দিকেই বেশি জোর দিয়েছেন।

একই সঙ্গে গণমাধ্যম এবং সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন তারা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১৮ জনই শিশু। ২০১৪ সালের আত্মহত্যায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। যা ২০১১ সালে ছিল ৩৮তম।

জানা যায়, ১৯ জুন নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন পাথরঘাটায় বাবা-মা বকা দেওয়ায় অভিমান করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে নুরুন্নাহার আক্তার মুন্নি নামে এক কিশোরী। এক মে নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন হাজারি গলিতে ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে নয়ন ধর নামে ১৫ বছরের এক শিশু শ্রমিক। ২০ জানুয়ারি ফটিকছড়ি ভুজপুর থানার বাদুরখিলে প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে আসমা আকতার নামে এক কিশোরী। ২০১৫ সালের ২৩ মার্চ মিরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলী এলাকায় মা বকা দেওয়ায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিশি আকতার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর