সাত দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাত উপজেলা, পাঁচ পৌরসভা ও এক থানার আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন দায়িত্বশীলরা। ইতিমধ্যে বেঁধে দেওয়া সাত দিন সময়ের তিন দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। গত সোমবার দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিলুপ্ত করা হয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আওতাভুক্ত সব উপজেলা ও পৌরসভায় বিদ্যমান সাংগঠনিক কমিটি। নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন হলে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে সম্মেলনের আয়োজনের কেন্দ্রীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে এত কম সময়ে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বের কমিটি গঠন করা সম্ভব কি না তা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সদস্যসচিব মোস্তাক আহমেদ খানসহ কমিটির অন্য নেতারা। যদিও দীর্ঘদিন পর উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি গঠন হচ্ছে, তা নিয়ে বেশ সরব রয়েছেন এখানকার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। অনেকে আহ্বায়ক কমিটিতে ঢোকার জন্য জোর প্রচেষ্টা ও নানাভাবে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির অধীন ৭টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা ও একটি থানায় সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- বাঁশখালী উপজেলা ও পৌরসভা, চন্দনাইশ উপজেলা ও পৌরসভা, লোহাগাড়া উপজেলা, বোয়ালখালী উপজেলা ও পৌরসভা, পটিয়া উপজেলা ও পৌরসভা, সাতকানিয়া উপজেলা ও পৌরসভা এবং আনোয়ারা নির্বাচনী এলাকা। আনোয়ারার মধ্যে ইতিপূর্বে কর্ণফুলী থানা অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সম্প্রতি কর্ণফুলী উপজেলা হওয়ায় এবার সেখানে পৃথক কমিটি গঠন হতে যাচ্ছে। এদিকে দক্ষিণের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ও চাপের মধ্যে রয়েছি ঠিকই, তবে নেতা-কর্মীদের আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস দেখে মনে হচ্ছে আমার ওপরে দেওয়া এই গুরুদায়িত্ব ভালোই ভালোই পালন করতে পারব। কারণ, প্রতিটি কমিটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য (সর্বোচ্চ একমাস) করা হলেও আমাদের অনেক যোগ্য ও গ্রহণযাগ্য একাধিক নেতা দায়িত্ব নিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। তাই আমরা নেতৃত্ব যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ পাচ্ছি এবং যথাযথ নেতৃত্বকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করা হবে। বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির এখন অনেকটা পৌষমাস চলছে। কমিটি গঠন নিয়ে চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে তৃণমূল পর্যায়েও। কারণ, আগামী এক মাসের মধ্যেই প্রতিটি ইউনিয়ন ও ইউনিট পর্যায়ে বিএনপির কমিটি গঠন হবে। এ নিয়ে সরব-সরগরম রয়েছে দক্ষিণের রাজনৈতিক মাঠ। তৃণমূল থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণের উপজেলা লোহাগাড়া বিএনপির আহ্বায়ক হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন বিএনপি নেতা আসহাব উদ্দিন, সাজ্জাদুর রহমান ও মঞ্জুর উদ্দিন চৌধুরী। পাশাপাশি সাতকানিয়া উপজেলার আহ্বায়ক হওয়ার তদবির-চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, শেফাত উল্লাহ, জামাল হোসেন ও আবদুল গাফফার চৌধুরী। শেষোক্তজন সম্প্রতি সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ ছাড়া সদস্য সচিব হওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন অধ্যাপক এহছানুল মাওলা। বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হতে চান সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম হোসাইনী, বিএনপির প্রবীণ নেতা ইব্রাহীম খলিল, আমিনুর রহমান চেয়ারম্যান। এ ছাড়া সদস্য সচিব হওয়ার তদবিরে রয়েছেন উপজেলা বিএনপি নেতা আলমগীর কবির।
এদিকে আহ্বায়ক কমিটিতে ঠাঁই পেতে সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী বা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির নেতারা। এখানে আহ্বায়ক হওয়ার জোর তদবির চালাচ্ছেন বিএনপির প্রবীণ নেতা মোশাররফ হোসেন। তার পরেই রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আবু, হাসান চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম ও আনছার চেয়ারম্যান। এ ছাড়া সদস্যসচিব হওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন ভিপি মোজাম্মেল হক ও হেলাল উদ্দিন। চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হতে চান- বিএনপি নেতা নুরুল আনোয়ার, ইউনুস বাবুল, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। পটিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হওয়ার জন্য তদবির করছেন, বিএনপির প্রবীণ নেতা নুরুল ইসলাম সওদাগর, কাজী মোজাম্মেল ও বদরুল খায়ের চৌধুরী। এ ছাড়া নবগঠিত কর্ণফুলী উপজেলায় আহ্বায়ক হওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিএনপি নেতা এহসান খান, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন ও মোহাম্মদ ওসমান। মাত্র এক মাসের জন্য হলেও প্রতিটি উপজেলার মতো পৌরসভাগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজমান। পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতেও একাধিক নেতা আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব হওয়ার জন্য নানাভাবে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।