সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকালীন গত ১৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রংপুর মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে। গ্রেপ্তার হয়েছেন কয়েক শতাধিক। ওইসব মামলা প্রত্যাহারের কথা থাকলেও অদ্যাবধি সেটি হয়নি। এখনো ওই মামলাগুলোতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া রংপুর বিভাগে পুলিশের কাজে বাধা, সন্ত্রাস, নাশকতা পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গত ১০ বছরে ৩ হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় লক্ষাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। যার মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন কয়েক হাজার। ওইসব মামলাও এখন পর্যন্ত প্রত্যাহার হয়নি। ফলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিএনপি নেতারা বলেন, সব মামলাই রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহার জরুরি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের ৮ উপজেলায় বিভিন্ন ধারায় ২০০টির বেশি মামলা হয়েছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৫ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে। গ্রেপ্তার হয়েছেন কয়েক শ। বিগত বছর রংপুর জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুই শতাধিক জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এর আগে গঙ্গাচড়া উপজেলায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে কয়েকশ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এ ঘটনায় দলের বেশকিছু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলায় বিভিন্ন অভিযোগে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১০০টির বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ১০ সহস্রাধিক। নীলফামারীতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা কমপক্ষে ৫০টি মামলায় আসামি ৫ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী। কুড়িগ্রাম, উলিপুর, ফুলবাড়ী ও রাজীবপুর থানায় ৫০টির বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয় শতাধিক জনকে।
লালমনিরহাটে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১০০টির বেশি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পঞ্চগড় সদরসহ তেঁতুলিয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বেশকটি মামলায় সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয় । দিনাজপুর কমপক্ষে ৫০টি মামলায় আসামি করা হয় ২/৩ হাজার নেতা-কর্মীকে। গাইবান্ধায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১০০ টির বেশি। এর মধ্যে পলাশবাড়ী এবং সুন্দরগঞ্জ থানায় সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে।
নেতা-কর্মীরা বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে তখন বলা হয়েছিল সব রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি।
রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু বলেন, ১৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত তার এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২২টি। আসামি হয়েছে ৩ হাজারের বেশি। গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকেই। নেতা-কর্মীরা জামিন পেলেও এখন পর্যন্ত কোনো মামলাই প্রত্যাহার করা হয়নি। মামলায় হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, গত ১০ বছরে রংপুর বিভাগে ৩ হাজারের বেশি মামলায় দেড় লাখ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী। ওইসব মামলাও এখন পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হয়নি। নেতা-কর্মীরা আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। তিনি দ্রুত ওইসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।