রাজশাহীর নয়টি উপজেলায় পৌরসভা রয়েছে ১৪টি। এসব পৌরসভার নাগরিকদের কর্তৃপক্ষ বা সরকার নির্ধারিত সব ধরনের কর দিতে হয়। কিন্তু নাগরিকদের অনেকেই নাগরিক সুবিধা যেমন- পানি, বিদ্যুৎ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সেবা থেকে বঞ্চিত। অনেক এলাকায় নেই পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা। মশকনিধনসহ আরও কিছু সেবার নূ্যূনতমও পান না তারা। অথচ প্রতি মাসের পৌরকরের সঙ্গে পানির বিল, রাস্তা আলোকায়নের বিদ্যুৎ বিল ও পরিচ্ছন্নতা বিল আদায় করা হচ্ছে। বিশেষ করে পানির পাইপলাইনই বসানো হয়নি, কিন্তু করের সঙ্গে আদায় হচ্ছে পানির বিল। রাজশাহীর ৯ উপজেলায় ১৪টি পৌরসভা হচ্ছে বাঘা উপজেলার বাঘা ও আড়ানী পৌরসভা, চারঘাট উপজেলায় চারঘাট পৌরসভা, পুঠিয়া উপজেলার পুঠিয়া পৌরসভা, পবা উপজেলার কাটাখালী ও নওহাটা পৌরসভা, গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট এবং গোদাগাড়ী পৌরসভা, তানোর উপজেলার মু ুমালা ও তানোর পৌরসভা, দুর্গাপুর উপজেলার দুর্গাপুর পৌরসভা, বাগমারার ভবানীগঞ্জ এবং তাহেরপুর পৌরসভা ও মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর অর্ধেক পৌরসভাতেই পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। যারা এ সেবা দেয়, তারাও আংশিক এলাকায় এ সুযোগ তৈরি করতে পেরেছে। ১৪টি পৌরসভার ৯টিতে রাস্তা আলোকায়নে আংশিক এলাকায় বৈদ্যুতিক লাইট দিয়ে থাকে। পৌরসভাগুলো শুধু নামমাত্র পৌর অফিস ও দু-একটি বাজারে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করে। অথচ গণহারে আদায় করা হয় সব বিল। এ বিষয়ে চারঘাট পৌরসভার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাড়িতে পানির লাইন আছে। তবে পানি পাওয়া যায় না। বিল তো ঠিকই দিতে হয়। তারা বাধ্যতামূলক বিল নেয়।’ পুঠিয়া পৌরসভার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, পুঠিয়া পৌরসভা নামের দিক দিয়ে শুধু পৌরসভা। এখানে না আছে লাইটের ব্যবস্থা, না আছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে কোনো উদ্যোগ। শুধু বছর শেষে ট্যাক্স আদায়।
এদিকে, কয়েকটি পৌরসভার প্রশাসক নানান সীমাবদ্ধতায় নাগরিক সেবা বিঘিœত হচ্ছে স্বীকার করে সেবা বাড়ানোর তৎপরতা চলছে বলে জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ সেবা না দিয়ে বিল নিচ্ছেন, এ ধরনের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে রাজশাহীর কাঁকনহাট পৌরসভার প্রশাসক শামসুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখনো পানির সংযোগ সব জায়গায় দিতে পারিনি। বিদ্যুৎ লাইনও সব জায়গায় দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’ আড়ানী পৌরসভার প্রশাসক সাবিহা সুলতানা ডলি বলেন, ‘সেবা না দিয়ে বিল আদায়-সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। কেউ কোনো সেবা না পেয়ে বিল দেবে এমনটি নয়। আমি নির্বাহীকে বলে দিচ্ছি- এটি কীভাবে চলছে, সেটি যাতে আমাকে আমাকে জানায়।’ অপরদিকে, পৌরসভাগুলোর সার্বিক সেবা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করছেন জানিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি দায়িত্বে এসেই বেশ কিছু পৌরসভা ভিজিট করেছি। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি নিয়ে আমরা সবখানে কথা বলেছি। পৌরসভাগুলোর কেউই কিন্তু এ কথা বলেননি যে, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এ সেবাগুলো দিতে পারছি না।
ফান্ডের সংকট থাকলে তাদের আয়ও বাড়াতে হবে। তবে বাড়ানোর ক্ষেত্রে কর্মপরিকল্পনাগুলো স্মার্ট পাইনি।’