আওয়ামী লীগের পতনের পর বের হতে শুরু করেছে দলটির এমপি, মেয়র ও মন্ত্রীদের দুর্নীতির চিত্র। প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারা সবাই পলাতক।
এ বছরের ২২ এপ্রিল জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, তার স্ত্রী শাহীন আকতার রেণী ও তাদের মেয়ে আনিকা ফারিহা জামান অর্ণার বিরুদ্ধে আলাদা তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৬১ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ আসনের এমপি শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২৪ এপ্রিল দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে দুই দফায় ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ এবং তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। পাশাপাশি তাদের সহযোগিতার অভিযোগে এসব মামলার একটিতে আরও ছয়জনকে এবং আরেকটিতে পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। ২৯ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে মামলা দুটি করা হয়।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-১ আসনের সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, তার স্ত্রী নিগার সুলতানাসহ চারজনের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করেছে দুদক। ১২ মার্চ মামলাগুলো করা হয়। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। আক্তার হোসেন বলেন, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১৩ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার ৫৩৩ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তার ৫৭টি ব্যাংক হিসাবে ৪৪৫ কোটি ২৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩৯ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে।
রাজশাহী-৪ আসনের সাবেক এমপি এনামুল হক ও তার স্ত্রী এনা প্রপার্টিজের চেয়ারম্যান তহুরা হকের নামে মামলা করেছে দুদক। ২৮ এপ্রিল দুদকের সহকারী পরিচালক মিনহাজুল বিন ইসলাম মামলা করেন। তাদের বিরুদ্ধে ২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংকে অবৈধভাবে ২ হাজার ২৪২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার লেনদেনের অভিযোগ আছে।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাবেক এমপি ডা. মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে ২৫ ডিসেম্বর মামলা করে দুদক। দুদকের মামলায় বলা হয়েছে, ডা. মনসুর রহমান ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেন।
রাজশাহী-৪ আসনের সাবেক এমপি কারাবন্দি আবুল কালাম আজাদের নামে ২১ জানুয়ারি মামলা করেছে দুদক। এমপি হওয়ার আগে আবুল কালাম আজাদ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ছিলেন। মেয়র থাকাকালে তিনি ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পৌরসভা থেকে মোট ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক এমপি আয়েন উদ্দিন ও তার স্ত্রী এলিনা আক্তার পলির বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ১০ মার্চ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এ আদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেওয়া হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক কিষান ঘোষ নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন।