ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দুঃশাসন থেকে মুক্ত হয় লাল সবুজের পতাকার সুজলা সুফলা ছোট্ট বাংলাদেশ। সেই আন্দোলনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এ আন্দোলনকে আরও বেগবান করে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সেই আন্দোলন দমাতে অধিকার চাওয়া ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশকে লেলিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
আর সেই থেকেই ডাক আসে এক দফার। ৩৬ দিনের আন্দোলনে অনেক তাজা প্রাণের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটায় ছাত্র-জনতা। জুলাই অভ্যুত্থান আন্দোলনে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদানকে সম্মান জানাতে ‘১৮ জুলাই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি রেসিস্ট্যান্স ডে’ উদযাপন করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। জুলাই অভ্যুত্থানকে উপজীব্য করে চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী, গান ও ড্রোন শো দিয়ে সাজানো ছিল মনোজ্ঞ এ আয়োজন।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী জুলাই পুনর্জাগরণের কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল রাতে রাজধানীর হাতিরঝিলের এম্ফি থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয় জমকালো এ আসর।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়েই ‘আওয়াজ উডা’ শিরোনামের এ অনুষ্ঠানের পর্দা ওঠে।
এরপর ছিল চলচ্চিত্র প্রদর্শনী পর্ব। এ পর্বের শুরুতেই প্রদর্শিত হয় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অন জুলাই এবং বুয়েটের শিক্ষার্থী শহীদ আবরার ফাহাদকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’। এরপর প্রদর্শিত হয় জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র “হিরোস উইদাউট কেপস : প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিস ইন জুলাই, জুলাই বীরগাঁথা ও জুলাই উইমেন।”
পরপর চারটি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী শেষে শুরু হয় জুলাইয়ের গান শিরোনামের সুরের আসর। এ আয়োজনের শুরুতেই সমবেত কণ্ঠে শিল্পীরা পরিবেশন করে ‘দে দে পাল তুলে দে’ গানটি। ধারাবাহিক পরিবেশনায় আহমেদ হাসান সানি গেয়ে শোনান ‘পলাশীর প্রান্তর’, ‘চিরকাল নবীন’, ‘খুনি তত্ত্ব’ ও ‘ক্রন্দনরতা’ এ তিনটি গান। এতে শিল্পী তাশফী পরিবেশন করেন ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা’, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, ‘চল চল চল’ ও ‘আলো’ গানগুলো।
এ ছাড়া আরও পরিবেশিত হয় ‘দেশ সংস্কার’, ‘মানুষ হতে চাই’, ‘কাক শাসনামল’, ‘সব চুপ’, ‘গুলি’, ‘বাংলা ব্লকেড’, ‘চব্বিশের গণ অভ্যুত্থান’ ও ‘ধ্বংস’ শিরোনামের গানগুলো।
সবশেষে মঞ্চে আসে ব্যান্ডদল আর্টসেল। তারা পরিবেশন করে ‘কান্ডারি হুঁশিয়ার’, ‘অন্য সময়’, ‘দুঃখ বিলাস’, ‘পথচলা’, ‘এই বিদায়’, ‘চিলেকোঠার সেপাই’, ও ‘অনিকেত প্রান্তর’ এ সাতটি গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করে আর্টসেল।
প্রতিটি পরিবেশনায় উন্মাদনার ঢেউ খেলে যায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ এম্ফি থিয়েটারের প্রতিটি গ্যালারিতে থাকা দর্শক-শ্রোতাদের মাঝে। দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়ে ভিন্ন এক ভালোলাগা তৈরি হয় হাতিরঝিলজুড়ে। রাজধানীর প্রায় সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে উচ্ছ্বাসের জোয়ার নামে পুরো অনুষ্ঠানে।
সবশেষে রাত ১০টায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে মিউজিক্যাল ‘ড্রোন শো’ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।