চট্টগ্রামের পারকি সমুদ্রসৈকত। সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে পর্যটকরা এদিকে আসেন না। ফলে পারকিকে পর্যটনবান্ধব করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয় পর্যটন কমপ্লেক্সের। ২০১৯ সালে ১৩ দশমিক ৩৩ একর জায়গায় শুরু হয় ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শেষ হয়নি। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি পাঁচ বছরেও। তবে সম্প্রতি পর্যটন উপদেষ্টা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত সময়ে কাজ শেষ হলে পর্যটন খাতে অবদান রাখতে পারবে পারকি সমুদ্রসৈকত।
গত ২৭ আগস্ট এ প্রকল্প পরিদর্শনে আসেন পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন। এ সময় তিনি বলেন, পানি সমস্যাসহ নানান কারণে পারকি সমুদ্র সৈকতে নির্মাণাধীন পর্যটন কমপ্লেক্সের কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। আমি এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের সব ধরনের অবকাঠামোগত কাজ শেষ হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম নাসরীন জাহান বলেন, পারকি সমুদ্রসৈকতের পর্যটন কমপ্লেক্স প্রকল্পটি একটি সম্ভাবনাময় প্রকল্প। এ ক্ষেত্রে স্থানীয়দের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলের ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকার বিষয়ে জোর দেন তিনি।
পারকি সমুদ্রসৈকতের ব্যবসায়ী শাহেদুল ইসলাম বলেন, পারকি সৈকতকে ঘিরে হাতে নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এখানকার দৃশ্য বদলে যেত এবং এলাকাটি সমৃদ্ধ হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কাজটি শেষ না হওয়ার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ এখানে রাত্রিযাপন করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া কিছু হয়রানির কারণেও দিন দিন পর্যটকরা পারকি বিচ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
জানা যায়, পর্যটন কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতাধীন মোট ১৭টি স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। ১৪টি আধুনিক কটেজ রয়েছে। এর মধ্যে চারটি ডাবল ডুপ্লেক্স কটেজ ও ১০টি সিঙ্গেল কটেজ, একটি ২৫০ আসনের কনভেনশন হল। তৃতীয় তলাবিশিষ্ট একটি সার্ভিস ব্লক, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের থাকার বিশেষ ব্যবস্থাসহ পর্যটকদের জন্য সিঙ্গেল ব্যাচেলর সার্ভিস রুম ৩৫টি, কমপ্লেক্স সার্ভিস স্টাফদের জন্য ৪৪টি রুম রয়েছে। এ ছাড়া একটি লেক, দুটি পিকনিক শেড, কুকিং শেড। একটি খেলার মাঠ, যার মধ্যে সব ধরনের খেলার ব্যবস্থা থাকবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের কাজগুলোকে তিন ভাগে বাস্তবায়ন করছে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে সীমানাপ্রাচীর ও গেট পোস্টের কাজ করছে রাজ করপোরেশন। বালু ভরাট, হ্রদ, ভিতরের রাস্তা ও নালার কাজ নিয়াজ ট্রেডার্স এবং অবকাঠামোগত অন্যান্য কাজ করছে দেশলিংক লিমিটেড। তার মধ্যে দেশলিংক লিমিটেডের দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রকল্পটি সময়মতো শেষ করতে পারেনি। প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটক পার হয়ে ভিতরে কাজ করছেন শ্রমিকরা। কটেজগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলেও পলেস্তারা ও আস্তরণের কাজ শেষ হয়নি। বিদ্যুৎ লাইন টানা হলেও সংযোগ দেওয়া হয়নি। একটি মাল্টিপারপাস ভবনসহ দুটি ভবনের কাজ শেষ হয়নি।