দেশের দ্বিতীয় সংসদ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ও ফলাফল নিয়ে নানামুখী হিসাব-নিকাশের কথা শোনা গেছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়েও। প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন কর্মচারীও একে অপরের সঙ্গে গতকাল ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলের নানান বিশ্লেষণ করেন। নির্বাচনে ছাত্রদল কেন হেরেছে, কেন ছাত্রশিবির এতটা ভালো করেছে, ভোটে কিছু প্রার্থীর অবস্থা কীভাবে বেশ খারাপ হলো এ রকম নানা প্রশ্ন-উত্তরে সরব আলোচনা ছিল সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে।
নাম প্রকাশ না করে একজন সচিব বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ছাত্রদলের প্রার্থীরা জিতবে। সেখানে উল্টো একচ্ছত্রভাবে ছাত্রশিবিরের জয়জয়কার। এটার অর্থ দাঁড়ায় ভিতরে ভিতরে ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।’ আরেক সচিব বলেন, ‘ডাকসু জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না। জাতীয় নির্বাচনে আলাদা একটা জোয়ার থাকে। যদিও সহকর্মীদের কাছ থেকে এ নির্বাচন নিয়ে নানা কথা শুনছি।’
এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘ভোটের ফলাফল নিয়ে নানান কথা শোনা যাচ্ছে। ব্যবধান অনেক; তাই একবার বিশ্বাস হচ্ছে তো আবার হচ্ছে না। তবে এ নির্বাচনের পর দেশের দলগুলোও নিশ্চয় হিসাবনিকাশ শুরু করেছে।’
ব্যাচমেটদের সঙ্গে আলোচনায় একাধিক কর্মকর্তা নানান দিক থেকে নির্বাচনের ফলাফল তুলে ধরেন। ২১ ব্যাচের কয়েকজন যুগ্মসচিব নিজেদের মধ্যকার আলোচনায় বলেন, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও শিবিরের জয়জয়কার হবে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ভোট কোন দিকে গেছে এ নিয়ে প্রশ্ন করেন এক ব্যাচমেট। আরেকজন জবাবে বলেন, ‘সবাই হয়তো ভোটার ছিল না। যারা ভোটার ছিল তাদের কেউ কেউ বামদলের প্রার্থীদের ভোট দিছে, কিছু ভোট ছাত্রদলের প্রার্থীরা পেতে পারে।’
সচিবালয়ের ছয় নম্বর ভবনে কয়েকজন উপসচিব ফলাফল নিয়ে আলোচনায় বলেন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলেও ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান জিততে পারেনি। আরেকজন উপসচিব দাবি করেন, তাকে (আবিদ) হারানো হয়েছে। এ সময় আরেক ব্যাচমেট বলেন, ‘ওইসব ফালতু কথা বলে লাভ নেই। এটা শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের ভোট, এখানে দুই নম্বরি সহজ বিষয় নয়। ভিতরে ভিতরে শিবির যে অনেক শক্তিশালী সংগঠন ডাকসুতে সে প্রমাণ রেখেছে তারা।’ নির্বাচনে একাধিক ব্যালট পেপার আগেই পূরণ করা ছিল এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা আলোচনা করেন। তখন আরেক সহকর্মী বলেন, ‘পুরো নির্বাচনে এ রকম সুনির্দিষ্ট করে এদিকসেদিক হতে পারে।’ কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মচারী সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডায় বলেন, ‘ইসলামী ছাত্রশিবিরকে গত ১৬ বছর আওয়ামী আমলে পেলেই গ্রেপ্তার বা দৌড়ের ওপর রাখত। সেই শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিতরে ভিতরে এত ভোট যা সত্যি বিস্ময়কর। তারা ভোটে অবাক করা সাফল্য দেখিয়েছে।’ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন এ সময় বলেন, ‘আগামী দিনেও তারা নেতৃত্বে ভালো করবে। তাদের বুদ্ধিমত্তায় ধরা খেয়েছে ছাত্রদল। বাম দল তো ঘেঁষতেই পারেনি।’ একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সামনের জাতীয় নির্বাচনে ডাকসু ভোটের ফলাফল কী প্রভাব ফেলবে জানি না, তবে আগামী নির্বাচনে কোনো দলের অতি মাত্রায় আত্মবিশ্বাসী হলে ফলাফল ভালো হবে না।