বুধবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বগুড়ায় আলুর বাম্পার ফলন

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় আলুর বাম্পার ফলন

বগুড়ায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এ ছাড়া পাইকারি বাজারে জাতভেদে আলু বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে। এদিকে নতুন আলু বাজারে আসতেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ব্যাপারি আসছেন বগুড়ায় আলু কিনতে। জেলার প্রায় ৫০ শতাংশ সবজির স্থান দখল করেছে আলু। বগুড়ায় উৎপাদিত আলু এখন প্যাকেটজাত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানি হচ্ছে বলেও জানান আলু ব্যবসায়ীরা। এবার বগুড়ায় গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সরেজমিন দেখা যায়, শীতকে উপক্ষো করে বগুড়ায় কৃষকরা জমি থেকে আলু তুলে তা বাজারে আনতে শুরু করেছেন। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় সবজির পাইকারি মোকাম জেলার শিবগঞ্জের মহাস্থান হাট। এই হাটে কুয়াশাভেজা ও পাখিডাকা ভোর থেকেই কৃষক তাদের আলু আনতে শুরু করেন। ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় কেনাবেচা। কৃষকদের কাছ থেকে পাইকারি আলু কিনতে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকারি ব্যাপারিরা আসেন। সোমবার সকালে মহাস্থান হাটে লাল পাকরি আলু ৪৪০ থেকে ৫০০ টাকা মণ, সাদা সেভেন জাতের আলু বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, বড় হল্যান্ড স্টিক জাতের আলু বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৩৫০ থেকে ৩৯০ টাকা, সাদা রোমানা আলু ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা প্রতি মণ। মহাস্থান হাটে অন্যান্য জাতের আলুর তুলনায় লাল পাকরি জাতের আলুর বেশি পাওয়া যায়। মহাস্থান হাটে মেসার্স দুই ভাই সবজি ভা রের পাইকার জব্বুর সরকার বটু, ঢাকার পাইকার জাহিদুর রহমান, চট্টগ্রামের পাইকার আজিজুল হাকিমের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, বগুড়ার মহাস্থান হাটে বিভিন্ন জাতের মৌসুমি আলু পাওয়া যায়। এখন দাম কম। কারণ কোল্ড স্টোরেজে আলু নেওয়া শুরু হয়নি। তবে কৃষকের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে আলুর দাম দিয়ে কেনা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের উৎপাদিত আলু কিনে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হবে। দেশের সব জেলায় আলু উৎপাদন হয় না। তাই আলু কিনে অন্য জায়গাতে ভালো লাভে বিক্রি করা সম্ভব হয়। মৌসুমের শুরুর দিকে আলুর দাম কম ছিল। এখন পাইকারের সংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে আলুর দামও। অনেক পাইকার বগুড়ায় আলু কিনে তা প্রক্রিয়াকরণ করে দেশের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইরাক, সৌদি আরবের দেশগুলোতে আলু রপ্তানি করবেন গতবারের মতো বলেও পাইকাররা জানান। বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নান ভ্যানে করে প্রায় ২৫ মণ লাল পাকরি জাতের আলু এনেছেন। তিনি মেসার্স দুই ভাই সবজি ভান্ডারের পাইকার জব্বুর সরকার বটুর কাছে প্রতি মণ আলু বিক্রি করেছেন ৪৫০ টাকা দরে। বেলা হয়ে যাওয়ায় মণপ্রতি প্রায় ১৫ থেকে ২০ টাকা কম পেয়েছেন। গত সপ্তাহে এই আলু তিনি বিক্রি করেছিলেন ৪১০ টাকা মণ দরে। তবে এবার দাম বাড়ায় খুশি তিনি। মহাস্থানে কথা হয় একই ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, ৩০ মণ সাদা সেভেন জাতের আলু বিক্রি করেছেন ঢাকার পাইকারদের কাছে। প্রতি মণ আলু বিক্রি করে পেয়েছেন ৩৪০ টাকা।

 মহাস্থান হাটে আলু বিক্রি করতে আসা কৃষকরা জানান, এবার আলুর জাতভেদে চাষ করতে প্রতি বিঘায় ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কারণ এবার কীটনাশক ও সারের দাম গতবারের তুলনায় বেশি।

এদিকে শিবগঞ্জের মহাস্থান হাটের তুলনায় বগুড়া শহরের খুচরা বাজারে বিভিন্ন জাতের আলুর দাম পাইকারি বাজার থেকে প্রায় ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সোমবার দুপুরে শহরের ফতেহ আলী, রাজাবাজার, কলোনি বাজার, মালতীনগর বাজার, বউবাজার, কাইলার বাজার, গোদারপাড়া বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। বাজারগুলোতে হাগড়াই জাতের আলু ৩৫ টাকা কেজি, লাল পাকরি আলু ২০ টাকা কেজি, কার্ডিনাল আলু ২০ টাকা কেজি, স্টিক জাতের আলু ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক দুলাল হোসেন জানান, বগুড়া আলু উৎপাদনে অন্যতম একটি জেলা। এ জেলার সদর, শিবগঞ্জ, কাহালু, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি, নন্দীগ্রাম, সোনাতলা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয়। গত কয়েক মৌসুম ধরে বগুড়ায় বিভিন্ন জাতের আলুর চাষ ও উৎপাদন ভালো হচ্ছে। গত মৌসুমে জেলায় প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন আলুর উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৩৮ হাজার মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূলে হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি উৎপাদন  হয়েছে। এতে করে জেলায় প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হবে। এই মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৫ হাজার ৪৫৪ হেক্টর কৃষি জমি। এদিকে আলুর দাম নিয়ে জয়পুরহাটের কালাই এলাকার আরবি কোল্ড স্টোরেজের স্বত্বাধিকারী ও বগুড়া রাজাবাজার আড়তদার ও ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, এখনো কোল্ড স্টোরেজে আলু কিনে মজুদ করা শুরু হয়নি। বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলায় প্রায় ৫৫টি আলু মজুদের কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। যেগুলোতে আলু মজুদ করার জন্য প্রস্তুতি চলছে। আলু মজুদ শুরু হলে আলুর দামও বাড়বে এবং কৃষক আলুর দাম পাবেন বলেও জানান তিনি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর