একসময় যাদের দেখা যেত শুধু টেলিভিশন নাটক বা বিজ্ঞাপনচিত্রে, সময়ের পরিক্রমায় তারাই এখন বড়পর্দার উজ্জ্বল মুখ। ছোটপর্দায় নিজেদের মেধা, সৌন্দর্য ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে তারা সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছে গেছেন চলচ্চিত্র জগতে। এ রূপান্তর শুধু ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারে নয়, বরং গোটা চলচ্চিত্রশিল্পের জন্যও তা এক ইতিবাচক প্রবাহ বলা চলে। ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দায় এসে সফলতার তালিকায় প্রথমে আসে যার নাম তিনি দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। তিনি সৌন্দর্য ও অভিনয়ে এই বয়সেও দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। জয়ার ক্যারিয়ার শুরু হয় ছোটপর্দা দিয়ে। বহু নাটক, টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন, হয়েছেন বহু বিজ্ঞাপনের মডেলও। তার অভিনীত মেজবাউর রহমান সুমনের ‘তারপরও আঙ্গুলতা নন্দকে ভালোবাসে’, মাহফুজ আহমেদের ‘চৈতা পাগল’ এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। তবে সে সময় তাকে দেশের নাট্যদর্শক সঠিক মূল্যায়ন করতে পারেনি। এরপর জয়ার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ২০০৪ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ব্যাচেলর’ দিয়ে। জয়া বরাবরই সময় নিয়ে সিনেমা করেছেন। যার ফলে তার একটি সিনেমা থেকে অন্য সিনেমার মধ্যকার সময় বেশ লম্বা। ‘ব্যাচেলর’-এর পর ছয় বছর বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় সিনেমা নুরুল আলম আতিকের ‘ডুবসাঁতার’ করেন। এরপর করেন তানিম নূরের ‘ফিরে এসো বেহুলা’, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর ‘গেরিলা’, রনির ‘চোরাবালি’, শাফি উদ্দিন শাফির ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’, অনিমেষ আইচের ‘জিরো ডিগ্রি’। জয়ার ভারত মিশন শুরু হয় ২০১৩ সালে ‘আবর্ত’ দিয়ে। এরপর একে একে করেন ‘রাজকাহিনী’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী ২’, ‘ঈগলের চোখ’, ‘পুত্র’, ‘অলাতচক্র’, ‘বিউটি সার্কাস’, ‘পেয়ারার সুবাস’, ‘নকশিকাঁথার জমিন’, ‘দেবী, ‘ক্রিসক্রস’, ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’, ‘ভালোবাসার শহর’, ‘খাঁচা’, ‘বিসর্জন’, ‘বিজয়া’, ‘রবিবার’, ‘কণ্ঠ’, ‘বিনিসুতোয়’, ‘ভূত পরী’, ‘ওসিডি’, ‘কালান্তর’, ‘ঝরা পালক’, অর্ধাঙ্গিনীসহ বেশ কিছু সিনেমা। ইরান-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘ফেরেশতে’, ওপারের ‘ডিয়ার মা’ রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। অন্যদিকে ওপারে শুটিং করছেন ‘আজও অর্ধাঙ্গিনী’র। এদিকে বাংলাদেশে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত আশফাক নিপুণের ওয়েব ‘জিম্মি’র পর তিনি নতুন করে আলোচনায় রায়হান রাফির ‘তাণ্ডব’ ও তানিম নূরের ‘উৎসব’ দিয়ে।
এরপর অবশ্যই আজমেরী হক বাঁধনের নাম বলতে হয়। অসংখ্য বিজ্ঞাপন ও অভিনীত নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চৈতা পাগল, শুভ বিবাহ, চাঁদ ফুল অমাবস্যা, রং, বুয়াবিলাস। বাঁধনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয় ২০২১ সালে কানে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ দিয়ে। এরপর ওয়েব ‘রবীন্দ্রনাথ কখনো খেতে আসেননি’ ও গুটি প্রশংসিত হলে আলোচনায় আসেন বলিউডের ‘খুফিয়া’য় আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে তিনি সানী সানোয়ারের ‘এশা মার্ডার : কর্মফল’ দিয়ে দর্শক মুগ্ধতায় ভাসছেন। নাট্যাভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশার টিভি নাটকের মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি সব শ্রেণির দর্শকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, টেলিভিশন, অস্তিত্ব, ডুব, ওয়েটিং রুম (টেলিছবি), রানা পাগলা : দ্য মেন্টাল, হালদা, ফাগুন হাওয়ায় প্রভৃতি। এরপর যার নাম বলতে হয় তিনি সুঅভিনেত্রী রুনা খান। তিনি অভিনয় ও সৌন্দর্যগুণে এখনো আলোচনার টেবিলে। নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের মঞ্চকর্মী রুনা খান ২০০৫ সালে সিসিমপুরের পর অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন। তার ফ্যামিলি ক্রাইসিস প্রশংসিত কাজ। ওয়েবের মধ্যে কষ্টনীড়, আন্তঃনগর, মার্ডার ৯০’স, বোধ, বোহেমিয়ান ঘোড়া, ‘অসময়’ দর্শকনন্দিত কাজ। সিনেমাতে সফল এ অভিনেত্রীর কাজ হচ্ছে হালদা, গহীন বালুচর, সিটকিনি, সাপলুডু, বিলাপ, একটি না বলা গল্প, নীলপদ্ম ও পাপ কাহিনী। তার অভিনীত ‘বক’ রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। জনপ্রিয় মডেল, স্থপতি, উপস্থাপিকা এবং নৃত্যশিল্পী অপি করিমের টিভি ক্যারিয়ার শুরু হয় বিখ্যাত ধারাবাহিক ‘সকাল-সন্ধ্যা’ দিয়ে। এরপর করেন ‘এফএনএফ’, শুকতারা, আপনজন, সবুজগ্রাম, তিতির সুখ, অক্ষয় কোম্পানির জুতো, ছায়াচোখ, জলছাপ, যে জীবন ফড়িংয়েরসহ অসংখ্য নাটক-
টেলিফিল্ম। জসীম আহমেদের ‘মায়ার জঞ্জাল’ ও সাম্প্রতিক সময়ে তানিম নূরের ‘উৎসব’ ছাড়াও তিনি করেছেন শঙ্খনীল কারাগার, ব্যাচেলর, সুবর্ণ রেখা সিনেমা। টিভি মিডিয়ার প্রতিভাময় ও নন্দিত অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ। সিসিমপুরের ইকরি নামে পরিচিত এই অভিনেত্রী একাধারে একজন পাপেটিয়ার, চারুশিল্পী, সংগঠক, মানবহিতৈষী কাজে নিয়োজিত ও অন্যায়ের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। মঞ্চ ও টিভি নাটক, বিজ্ঞাপনের মডেলের সঙ্গে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে সুনামের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। নওশাবার প্রথম নাটকের নাম ‘ছোটবেলা বড়বেলা আর প্রথম ধারাবাহিক ললিতা। তবে নাটকের পাশাপাশি তিনি সমাদৃত হন ‘উধাও’, ভুবন মাঝি, ঢাকা অ্যাটাক, স্বপ্নের ঘর, ঢাকা ড্রিমস, চন্দ্রাবতীর কথা, ছায়াবৃক্ষ, কসাই, ব্যাচ ২০০৩ দিয়ে। তিনি ভিকি জাহেদের ওয়েব ‘পূর্ণজন্ম’ ও নুহাশ হুমায়ূনের পেট কাটা ষ সিরিজের ‘সাড়ে ষোল’ দিয়ে নজর কাড়েন। তিনি কলকাতার ওয়েব সিরিজ ‘একেন বাবু’র পর সম্প্রতি করেছেন ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’। এরপর আরেক সুঅভিনেত্রী অর্চিতা স্পর্শিয়া প্রশংসিত হন অনন্য মামুনের ‘আবার বসন্ত, নিয়ামুল মুক্তার ‘কাঠবিড়ালী’সহ বন্ধন, ইতি তোমার ঢাকা, নবাব এলএলবি, ছক, ফিরে দেখা, জলকিরণ দিয়ে। এদিকে নতুন অভিনেত্রীদের মধ্যে চমক নিয়ে সিনেমায় হাজির হয়েছেন তাসনিয়া ফারিণ, মেহজাবীন ও সাবিলা নূর। ‘আরো এক পৃথিবী’ দিয়ে কলকাতায় অভিষেকের পর ফারিণ করেন ‘ফাতিমা’। সম্প্রতি করেছেন সঞ্জয় সমাদ্দারের ‘ইনসাফ’। মেহজাবীন চৌধুরী টিভি অঙ্গনে বেশ পরিচিত হলেও সিনেমায় অভিষেক হয় শঙ্খ দাশগুপ্তের ‘প্রিয় মালতী’ দিয়ে। পরবর্তী সিনেমা ‘সাবা’র মাধ্যমে নিজের লক্ষ্য কতদূর নিয়ে যায় তাই দেখার অপেক্ষায় সবাই। সম্প্রতি রায়হান রাফির ‘তাণ্ডব’ দিয়ে ধামাকা অভিষেক ঘটে টিভি মিডিয়া ও বিজ্ঞাপনের প্রিয়মুখ সাবিলা নূরের। এ অভিনেত্রীর পর্দায় অনবদ্য উপস্থিতি, অভিনয়, পারফরম্যান্স ও সৌন্দর্যে এখন মুখর তাবৎ সিনেমাপ্রেমীরা।