চট্টগ্রামের হালদা নদী রুপালি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির খনি। এ নদীকে ঘিরে এ অঞ্চলের মৎস্য, কৃষি, অর্থনীতি আবর্তিত হয়। এ ছাড়া এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য, নির্মাণশিল্প, পরিবহন ব্যবসার নানা দিকও জড়িত এ নদীর প্রবাহ ঘিরে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এ নদীর মোট অর্থনৈতিক মূল্য দেখানো হয়েছে ২৩ দশমিক ৭৭ ট্রিলিয়ন টাকা। হালদা নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘হালদা নদী হচ্ছে কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ভা ার। কিন্তু মানবসৃষ্ট নানা বাধার কারণে হালদা ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। অমূল্য এ সম্পদকে রক্ষা করতে আরও কঠোর প্রদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’ তিনি বলেন, ‘হালদা থেকে সংগ্রহ করা ডিমের পোনার চাহিদা রয়েছে পুরো দেশে। ডিম সংগ্রহ থেকে শুরু করে মাছ পূর্ণাঙ্গ হওয়া পর্যন্ত প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হয়। যা সাধারণ চোখে বোঝা যায় না।’ জানা যায়, দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হচ্ছে হালদা নদী। প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত হালদা নদীতে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ কার্প জাতীয় মা মাছগুলো ডিম ছাড়ে এ নদীতে। নদীতে ছাড়া ওই ডিম সংগ্রহ করেন স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা। প্রাকৃতি পরিবেশে সনাতন পদ্ধতিতে ফোটানো ডিমের রেণুর মান সব দিক থেকে সেরা বিবেচনা করা হয়। এ পোনার মৃত্যুর হার খুবই কম, বৃদ্ধি খুবই দ্রুত হয় এবং পরিণত মাছের স্বাদেও অনন্য। তাই দেশজুড়ে রয়েছে হালদার রেণুর ব্যাপক চাহিদা। চলতি বছর রুই ও কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ার পর নিষিক্ত ডিম থেকে রেণু ফোটানোর কাজ শেষ হয় জুনের শেষ সপ্তাহে। এবার আহরিত ডিমের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৫০০ কেজির মতো। যা থেকে রেণু উৎপাদন হয়েছে ৩০০ কেজি। হালদাপাড়ে প্রতি কেজি রেণু বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। প্রতি কেজি রেণুতে সাধারণত পোনা থাকে কমপক্ষে আড়াই লাখ। হালদা নদীসংশ্লিষ্ট গবেষকদের মতে, হালদা নদীর ডিমের পোনার বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। সঠিকভাবে যত্ন নিলে একটি পোনা এক বছরের মধ্যে আড়াই কেজি পর্যন্ত বড় হয়। প্রতি কেজি কার্প জাতীয় মাছ ২৮০ টাকা ধরলে একটি মাছের বাজারমূল্য হয় প্রায় ৭০০ টাকা। ২০ শতাংশ মৃত্যুর হার ধরে প্রতি কেজি রেণু থেকে পূর্ণাঙ্গ মাছ ২ লাখ। প্রতি কেজি পোনা থেকে এক বছরে পূর্ণাঙ্গ মাছ হয় প্রায় ১৪ কোটি টাকার। সে হিসেবে ৩০০ কেজি রেণু থেকে উৎপাদিত মাছের বাজারমূল্য হয় ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে ডিম সংগ্রহ, রেণু উৎপাদন এবং হালদার রেণু থেকে বড় বিক্রিকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হয় কমপক্ষে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। কৃষি, বালু উত্তোলন, জীববৈচিত্র্য, নির্মাণশিল্প, পরিবহন ব্যবসার নানা খাতে হয় আরও ৭০০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। সব মিলিয়ে হালদাকে ঘিরে বছরে কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।