শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে আধিপত্য বিস্তার করেই ড্র করেছে নাজমুল হোসেন শান্তর বাংলাদেশ। গলে টাইগাররা দলের চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখিয়েছে। বিশেষ করে পঞ্চম দিনের শেষ সেশনে লঙ্কানদের চাপে ফেলে দেয় নাজমুল বাহিনী। জয়ের জন্য ২৯৬ রান তাড়া করতে নেমে ৭২ রানে ৪ উইকেট হারায় ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার দল। রোমাঞ্চ ছড়িয়েও ড্র করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে। তবে টেস্টে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দিয়ে আলো ছড়িয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল শান্ত, মুশফিকুর রহিম, নাঈম হাসান। কিন্তু আলোচনায় টাইগার টেস্ট অধিনায়কই। যদিও ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সমালোচনা শোনে এসেছেন তিন ফরম্যাটেই নেতৃত্ব দেওয়া শান্ত। অথচ ক্রিকেটের অভিজাত ফরম্যাটেই তিনি এখন দলের ভরসা। গলে যে পারফরম্যান্স করেছেন এ ধরনের ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য বরাবরই শান্তর আছে, এমনটাই মনে করেন সাবেক টাইগার অধিনায়ক ও নির্বাচক হাবিবুল বাশার।
চেনা কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষ বুঝে পরিকল্পনা করে খেলেছেন নাজমুল শান্ত। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে হন ম্যাচসেরা। দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১৪৮ ও অপরাজিত ১২৫ রান করেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক ও টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে জোড়া সেঞ্চুরি করা বিশ্বের ১৬তম ব্যাটার শান্ত। টেস্টে ১৪তম খেলোয়াড় হিসেবে ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি করেন এ বাঁ-হাতি ব্যাটার। এ ছাড়া মুশফিক দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১৬৩ ও ৪৯ রান করেন। বোলিংয়ে দুই স্পিনার দুরন্ত সামর্থ্য দেখিয়েছেন। বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে নাঈমের ৫ উইকেট শিকারে বাংলাদেশ ১০ রানের লিড পেয়েছিল। তাইজুল ইসলাম এবং নাঈম হাসান উইকেট থেকে যেভাবে টার্ন এবং বাউন্স পেয়েছে, তাতে শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের বিপক্ষে বোলিং করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পেলে ম্যাচের ফলাফল ভিন্ন হতে পারত।
ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নাজমুল শান্ত বলেন, ‘এ সিরিজের আগে আমাদের দারুণ প্রস্তুতি ছিল এবং আমরা এ ম্যাচে সব ক্ষেত্রেই পারফরম্যান্স করেছি। মুশফিক ভাই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন। তাইজুল-নাঈম সত্যিই ভালো বোলিং করেছে।’ তবে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, কে আমাকে নিয়ে ভালো বা খারাপ বলল- সেদিকে আমি ফোকাস না করে চেষ্টা করি প্রতিদিন কীভাবে আরও ভালো করা যায়। কখনো হয়, কখনো হয় না। ক্রিকেট খেলাটাই এমন। তাই আলোচনা বা সমালোচনা নিয়ে ভাবি না। তবে নাজমুলের মন্ত্র একটাই- বেশি প্রত্যাশা না থাকা। কেননা, প্রশংসা যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। তাই টাইগার অধিনায়ক মূলত গুরুত্ব দেন- তিনি ব্যাটিং উপভোগ করছেন কি না, দলের হয়ে অবদান রাখছেন কি না, এসব বিষয়ে। তবে নাজমুল তার ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছেন। তিনি বলেন, এখানে আসার আগে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় পরিবর্তন করেছি। পরিচিত কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষ হওয়ায় এমন পরিকল্পনা ছিল। এ টেস্টের আগে আমার ভালো পরিকল্পনা ছিল। আমি খুবই পরিষ্কার ছিলাম যে আমি কী করতে চাই।’
তবে শান্তর এমন ফর্ম দেখে অবাক হননি সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক হাবিবুল বাশার। এ ধরনের ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য বরাবরই তার আছে। কিন্তু ক্রমাগত সমালোচনার কারণে এ বাঁ-হাতি ব্যাটার বিভিন্ন সময় চাপে পড়ে যান বলে মনে করেন হাবিবুল বাশার। তিনি বলেন, আশা করি এরপর দু-একটা ম্যাচে শান্ত রান না পেলে আবার সমালোচনা করবেন না। আমরা তাকে চিনি, সে আমাদের সব ফরম্যাটের অন্যতম সেরা ব্যাটার। এমন পারফর্ম সে সব সময়ই করার সামর্থ্য রাখে। কিন্তু আমরাই তাকে ট্রোলিং আর সমালোচনা করে চাপে ফেলে দিই।